ম্যাকিয়াভেলির রাজনীতির ধর্মনিরপেক্ষিকরন
প্রশ্ন-২; ম্যাকিয়াভেলি কেনো রাজনীতির
ধর্মনিরপেক্ষিকরনের কথা বলেছেন?
উত্তরঃ
ভূমিকাঃ
পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে
ম্যাকিয়াভেলি পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে ষোড়শ শতাব্দীতে তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার কাঠামো গড়ে
তোলেন। তাঁর লেখা দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল, দি প্রিন্স, দি ডিসকোর্সেস অন লিভি। তাঁর সমগ্র
রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষীকরণ সম্পর্কিত ধান-ধারণা ছিল
অন্যতম।
রাজনীতির ধর্মনিরপেক্ষীকরণঃ
মধ্যযুগে ইউরোপে ধর্ম সুদীর্ঘকাল ধরে
রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপিত হয়েছিল। ওই সময় কোনো চিন্তাবিদ ধর্ম বা নৈতিকতার বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারেননি।
এক্ষেত্রে ম্যাকিয়াভেলি প্রথম সম্পূর্ণভাবে মধ্যযুগীয় চিন্তাধারা থেকে সরে এসেছেন।
দীর্ঘ সময় ধরে ধর্মীয় আলোকে রাজনীতি আলোচনার যে-ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল, ম্যাকিয়াভেলি তাকে সমূলে উৎপাটিত করেন।
রাজনীতির ধর্মনিরপেক্ষীকরনের কারনঃ
ম্যাকিয়াভেলির রাজনীতির
ধর্মনিরপেক্ষীকরণের পেছনে বেশ কয়েকটি কারন ছিল। যেমন-
১) বুর্জোয়া শ্রেণীস্বার্থ রক্ষাঃ
ম্যাকিয়াভেলি ছিলেন বুর্জোয়াশ্রেণির
প্রতিনিধি। তাই বুর্জোয়া ব্যবস্থার উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বুর্জোয়া
শ্রেণিস্বার্থের অনুকূলে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রতত্ত্ব উপস্থাপন করেন। যোগাযোগ
ব্যবস্থা ও ব্যাবসা বাণিজ্যের উন্নতি এবং উৎপাদন সম্পর্কের পরিবর্তনের ফলে
পুজিপতিশ্রেণির আবির্ভাব ঘটে। রাষ্ট্রের ওপর এই শ্রেণির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
সমগ্র মধ্যযুগ ধরে যে-রাষ্ট্রের ওপর গির্জা কর্তৃত্ব করে আসছিল, সেই কর্তৃত্বটি বুর্জোয়াশ্রেণি ছিনিয়ে নেয়।
এইভাবে রাজনীতি মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে পদার্পণ করে এবং এটি হয়ে ওঠে
ধর্মনিরপেক্ষ। নিজ শ্রেণির স্বার্থকে সুরক্ষিত করার জন্য ম্যাকিয়াভেলি
রাষ্ট্রক্ষমতাকে পোপের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করেছিলেন।
২) সামাজিক পরিবর্তনঃ
সামাজিক পরিবর্তনের ফলে রাজনীতির ওপর
থেকে ধর্ম ও প্রথার প্রভাব দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে এবং সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব
ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। আনুগত্য সম্পর্কে নতুন ভাবনাচিন্তা গড়ে ওঠে। মধ্যযুগে ঐশ্বরিক
আইনকেই প্রাধান্য দেওয়া হত। তখন রাজার কর্তৃত্বকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়নি।
আধুনিক যুগে সুসংহত ও সুসংগঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে ওঠায় রাজা তথা রাষ্ট্রের প্রতি
আনুগত্যের প্রয়োজন অনুভূত হয়। ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থায় ধর্ম নয়, রাজনীতি ও জনগণের অংশগ্রহণই হয়ে ওঠে আসল
বিষয়।
৩) বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তিবাদী প্রবণতাঃ
রাজনীতির ধর্মনিরপেক্ষীকরণের পেছনে
ম্যাকিয়াভেলির বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তিবাদী প্রবণতারও বিশেষ অবদান আছে।
নবজাগরণের ফলে মানুষের মন অনেকটা কুসংস্কারমুক্ত হয় এবং সব বিষয়কে যুক্তি দিয়ে
বিচার করতে শেখে। সাধারণ মানুষ ধর্মকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি দিয়ে বিচার করে। ফলে প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন গির্জা পর্দার আড়ালে চলে যায়।
৪) রাজনীতির স্বাধীন সত্তা প্রদানঃ
ম্যাকিয়াভেলি ধর্ম বা নৈতিকতার মূল্য
অস্বীকার করতেন না। তবে তিনি চেয়েছিলেন রাজনীতির জন্য স্বতন্ত্র ক্ষেত্র স্থির করে
দিতে। অ্যারিস্টটল প্রবর্তিত নীতিশাস্ত্রভিত্তিক রাজনীতি মূল্যায়নেরও ঘোরতর বিরোধী
ছিলেন তিনি। তাঁর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি রাজনীতিকে স্বাধীন সত্তা প্রদানে সাহায্য
করেছিল।
৫) তৎকালীন ইটালির অনৈক্য ও অরাজকতাঃ
তৎকালীন ইটালির অনৈক্য ও অরাজকতা বা
দুরবস্থার জন্য ম্যাকিয়াভেলি গির্জাকেই দায়ী করেন। তিনি গির্জার কঠোর সমালোচনা করে
বলেছেন যে, দেশের ধ্বংসসাধনের
জন্য একমাত্র গির্জাই দায়ী। কারণ, গির্জাই দেশকে বিভক্ত
করেছে এবং আজও বিভক্ত করছে। তাই রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে গির্জা তথা ধর্মের প্রভাবকে
অব্যাহতি দিতেই
হবে।
মূল্যায়নঃ
পরিশেষে বলা যায় ম্যাকিয়াভেলির রাজনীতির ধর্মনিরপেক্ষিকরন সম্পর্কিত ধ্যানধারণা রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছিল। তার এই তত্ত্ব তৎকালীন ইটালির অরাজক অবস্থা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে সক্ষম হয়েছিল।
লেখক
জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ
এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস
(বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সহ)
যে প্রশ্নের উত্তর দরকার
সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।
উত্তর পেয়ে যাবে-
২) প্লেটো কীভাবে ন্যায়ের ধারণাটি ব্যাখ্যা করেছেন? ৫(২০১৯)
৩) প্লেটোর ন্যায়বিচার তত্ত্বটি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)
৪) প্লেটোর ন্যায়বিচার তত্ত্বটি সমালোচনাসহ বিশ্লেষণ করো। ১০ (২০২২)
২) প্লেটো কীভাবে ন্যায়ের ধারণাটি ব্যাখ্যা করেছেন? ৫(২০১৯)
0 মন্তব্যসমূহ