মানবাধিকারের ধারণার বিবর্তনের ইতিহাস
প্রশ্ন-১; মানবাধিকারের
ধারণার বিবর্তনের ইতিহাসের উপর একটি টীকা লেখ। ১০ (২০২৩)
উত্তরঃ
ভূমিকাঃ
মানব পরিবারের সকল সদস্যের সার্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তরযোগ্য
এবং অলঙ্ঘনীয় অধিকারই হলো মানবাধিকার। দুর্গাদাস বসুর মতে, মানবাধিকার
হল সেইসব অধিকার যা কোন প্রকার বিবেচনা নির্বিশেষে মনুষ্য পরিবারের সদস্য হিসেবে
ব্যক্তি মানুষ রাষ্ট্র বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ভোগ করে থাকে।
মানবাধিকারের উদ্ভব ও বিকাশঃ
মূলত মানব সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশের সাথে
সাথে মানবাধিকারের ধারনারও উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে। তবে ঠিক কবে থেকে মানবাধিকারের
উদ্ভব হয়েছে সে সম্পর্কে সঠিক কিছু জানা যায়না। তা সত্ত্বেও মানবাধিকারের উদ্ভব ও
বিকাশে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির কথা বলা যেতে পারে-
১) প্রাচীন ভারতীয় নীতিশাস্ত্র সমূহঃ
মানবাধিকারের ক্রমবিকাশের ধারায় প্রাচীন
ভারতীয় নীতিশাস্ত্র সমূহ এক গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রাচীন ভারতের
ধর্মীয় শাস্ত্রসমূহের আলোচনার মূল বিষয়ই ছিল ন্যায়-নীতি এবং মানব ধর্ম, যা বাস্তবে মানব অধিকারকেই নির্দেশ দেশ করে।
২) সাইরাস সিলিন্ডারঃ
৫৩৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারস্যের রাজা
দ্বিতীয় সাইরাস যিনি সাইরাস দ্য গ্রেট' নামে পরিচিত, ব্যাবিলন আক্রমণ করেন। ব্যাবিলন
আক্রমণের পর তিনি ব্যাবিলনীয়দের দ্বারা নির্যাতিত দাস জনগোষ্ঠীকে মুক্ত করে দেন
এবং তাদের নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থাও করে দেন। এরপর সাইরাসের নির্দেশে
একটি সিলিন্ডার তৈরি করা হয় যা সাইরাস সিলিন্ডার নামে অভিহিত। এতে সাম্রাজ্যজুড়ে
ধর্মীয় স্বাধীনতা, সহিষ্ণুতা ও মানবাধিকার বাস্তবায়নের কথা
বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এটিই বিশ্বের প্রথম মানবাধিকার
সনদ।
২) মদীনা সনদঃ
মানবাধিকারের প্রধান ভিত্তি স্থাপিত
হয়েছিল ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী হজরত মুহম্মাদ (স.) কর্তৃক মদীনা সনদ ঘোষণার মধ্য দিয়ে। মদীনা
সনদকে পৃথিবীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ লিখিত সংবিধান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এ
সনদে মোট ৪৭ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে যেগুলোতে মানবাধিকারের বিষয়গুলো সর্বপ্রথম
সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করা হয়েছে।
৩) ম্যাগনা কাটাঃ
মানবাধিকারের ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে
ম্যাগনা কার্টাকে একটি মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এটি মানবাধিকারের মহাসনদ
হিসেবে ইতিহাসে অভিহিত। এটি ছিলো মূলতঃ ইংল্যান্ডের রাজা জন ও ধনী বিত্তশালী
ব্যারনদের মধ্যে ১২১৫ সালে সম্পাদিত একটি চুক্তি। এতে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিলো যে, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাউন্সিলের
পূর্ব অনুমতি ব্যতিরেকে খামখেয়ালীভাবে জনগণের উপর কর আরোপ করা যাবেনা, তাদের ভূ-সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা যাবেনা, মানুষকে
আইনানুযায়ী ব্যতীত গ্রেপ্তার, কারারুদ্ধকরণ, সম্পত্তিচ্যুত, দীপান্তরিত বা নির্বাসিত কিংবা
হয়রানির শিকার করা যাবেনা প্রভৃতি।
৪) পিটিশন অব রাইটসঃ
সপ্তদশ শতকে ব্রিটিশ জনগণের আন্দোলনের
ফলে প্রথম যে তাৎপর্যপূর্ণ দলিলের সৃষ্টি হয় তা হল পিটিশন অব রাইটস। ১৬২৮ সালে পিটিশন অব রাইটস সংসদকর্তৃক আইনের আকারে
গৃহীত হয়েছিলো। পার্লামেন্টের সম্মতি ছাড়া কর আরোপ, বিনা
অপরাধে কারারুদ্ধকরণ, ব্যক্তিগত বাসস্থানে স্বেচ্ছাচারী
অনুপ্রবেশ এবং সামরিক আইনের প্রয়োগ থেকে জনগণকে সুরক্ষা প্রদান করেছিল এই দলিলটি।
৫) বিল অব রাইটসঃ
১৬৮৯ সালে বিল অব রাইটস ব্রিটিশ
পার্লমেন্টে গৃহীত হয় ও বিধিবদ্ধ আইনে রূপান্তরিত হয়। মানুষের মৌলিক মানবাধিকার
আদায়ের ক্ষেত্রে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল। প্রখ্যাত ফরাসী দার্শনিক
ভল্টেয়ারের মতে, বিল অব রাইটস
প্রত্যেক মানুষকে সেই সমস্ত প্রাকৃতিক অধিকার পুনরুদ্ধার করে দিয়েছে যেগুলো থেকে
তারা যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন শাসক থেকে বঞ্চিত ছিলো। যেমনঃ জীবন ও সম্পত্তির পূর্ণ
স্বাধীনতা, লেখনী দ্বারা জাতির নিকট কথা বলার অধিকার,
এবং শান্তিপূর্ণভাবে যেকোনো ধর্ম পালনের স্বাধীনতা প্রভৃতি।
৬) আমেরিকাতে মানবাধিকারের বিকাশঃ
ইংল্যান্ডের পর আমেরিকায় মানবাধিকারের
উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটে। এই বিকাশ ঘটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার
ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র একটি
ঐতিহাসিক দলিল যা ১৭৭৬ সালের ৪ঠা জুলাই পেনসিলভানিয়া প্রাদেশিক আইনসভায় অনুষ্ঠিত
কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের সভায় গৃহীত হয়। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সাথে যুদ্ধরত
তেরটি মার্কিন উপনিবেশ নিজেদের ব্রিটিশ শাসনের বাইরে স্বাধীন ও সার্বভৌম হিসেবে
ঘোষণা করে এবং যুক্তরাষ্ট্র নামে নতুন রাষ্ট্র গঠন করে।
৭) ভারতে মানবাধিকারের বিকাশঃ
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে
ভারতীয় নাগরিকদের মানবাধিকার সুনিশ্চিত করা হয় এবং সংবিধানের বিভিন্ন ধারায়
মানবাধিকারের স্বীকৃতির মাধ্যমে ভারতে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠনিক মর্যাদা লাভ করে।
এছাড়া ভারতে বিভিন সময় প্রনীত বিভিন্ন মানবাধিকার রক্ষা আইন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সংখ্যালঘু বা পশ্চাদপদ শ্রেণীর জন্য গঠিত বিভিন্ন কমিশন মানবাধিকারের
বিকাশে ভূমিকা পালন করেছে।
৮) জাতিসংঘ কর্তৃক মানবাধিকার ঘোষণাঃ
বিশ্ব মানবাধিকার সনদ বা মানবাধিকারের
সার্বজনীন ঘোষণাপত্র হল এমন একটি ঘোষণাপত্র বা একটি আন্তর্জাতিক দলিল যা জাতিসংঘের
সাধারণ পরিষদ দ্বারা ১৯৪৮ সালে গৃহীত হয় যা সমস্ত মানুষের অধিকার এবং স্বাধীনতাকে
সংহত করে। বিশ্ব মানবাধিকার সনদ বা মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ৩০টি
অনুচ্ছেদে মানুষের মানিবাধিকার রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে।
উপসংহারঃ
বর্তমানে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মানবাধিকারের বিষয়টি যথেষ্ঠ গুরুত্বের সাথে দেখা যায়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার রক্ষায় সর্বদা নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। ফলে বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে তার সঠিক তদন্ত যেমন হচ্ছে তেমনি তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে।
লেখক
জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ
এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস
যে প্রশ্নের উত্তর দরকার
জাস্ট সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।
উত্তর পেয়ে যাবে-
প্রথম অধ্যায়
১) মানবাধিকারের ধারণাটি সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২০)
২) মানবাধিকারের অর্থ ও প্রকৃতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ। ৫ (২০২১)
৪) মানবাধিকারের তৃতীয় প্রজন্মের যে কোনো পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর। ৫ (২০২১)
৫) বিশ্বমানবাধিকারের সনদ (UDHR)-এ লিপিবন্ধ হয়েছে এমন যে-কোনো পাঁচটি মানবাধিকার উল্লেখ কর। ৫ (২০২০)
৬) বিশ্বমানবাধিকারের সনদের (UDHR) নীতিগুলি সংক্ষপে আলোচনা কর। ৫ (২০২১)
৮) UDHR-এর উপর সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো। UDHR-এর পূর্ণ রূপটি কী ? ৫ (২০২৩)
যে প্রশ্নের উত্তর দরকার
জাস্ট সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।
উত্তর পেয়ে যাবে-
দ্বিতীয় অধ্যায়
১) মানবাধিকার সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ভারতীয় সংবিধানে গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২০)
৩) ভারতে মানবাধিকার সংরক্ষণে সাংবিধানিক বিধি-ব্যবস্থাগুলো আলোচনা কর। ১০ (২০২২)
৫) নিবর্তনমূলক আটক আইন কী? তুমি কি মনে কর ভারতীয় প্রেক্ষিতে এই আইন মানবাধিকার বিরোধী? ৫ (২০২২)
তৃতীয় অধ্যায়
১) ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের গঠন আলোচনা কর। ৫ (২০২০)
২) ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (NHRC) সদস্যদের নিয়োগ আলোচনা কর। ৫ (২০২১)
৩) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের গঠন বর্ণনা করো। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বর্তমান সভাপতি কে? ৫ (২০২৩)
৪) ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যাবলী সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২০)
৫) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ । ৫ (২০২১)
৬) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যাবলী সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ । ৫ (২০২২)
৬) ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাজগুলি বিশ্লেষণ করো। ১০ (২০২৩)
যে প্রশ্নের উত্তর দরকার
জাস্ট সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।
উত্তর পেয়ে যাবে-
চতুর্থ অধ্যায়
১) ভারতের বিভিন্ন মানবাধিকার আন্দোলন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ । ৫ (২০২০)
২) ভারতে সংগঠিত মানবাধিকার আন্দোলনসমূহের যে কোনো পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর। ৫ (২০২১)
৩) ভারতে মানবাধিকার রূপায়ণের বিভিন্ন সমস্যাগুলি সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২০)
পঞ্চম অধ্যায়
৭) Counter-terrorism-এর উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো। Terrorism-এর সংজ্ঞা দাও। ৫ (২০২৩)
0 মন্তব্যসমূহ