The
University of Burdwan
MA
Political Science
Paper;
102; liberal and Post liberal
Political Theory
Topic; English Enlightenment Liberalism
ভূমিকাঃ
পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে রেনেসাঁস বা নবজাগৃতির ফলে ইউরোপে
শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে রাজনীতি, ধর্ম, রাজধর্ম ও অর্থনীতি সম্পর্কে
অনুসন্ধিৎসার সৃষ্টি হয়। এ অনুসন্ধিৎসা থেকে জাগত হয় যুক্তিবাদ। যুক্তিবাদের প্রভাবে মধ্যযুগীয়
কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস মানুষের মন থেকে অনেকটা দূরীভূত হয় এবং মানুষের মধ্যে
উদারতা ও মানবতা বিকশিত হয়। এজন্য অষ্টাদশ শতককে জ্ঞানদীপ্তির যুগ বলা হয়ে থাকে। ইংল্যান্ডে জ্ঞানদীপ্তির
যুগে উদারনীতিবাদের বিকাশ ঘটে।
জ্ঞানদীপ্তির যুগে উদারনীতিবাদঃ
ইংল্যান্ডে জ্ঞান্দীপ্তির যুগের উদারনীতিবাদ বলতে মূলত হবস, স্পিনোজা এবং লকের চিন্তাধারাকে বোঝায় যারা ইংরেজি উদারনীতির ভিত্তি
স্থাপন করেছিলেন। হবস এবং স্পিনোজা প্রথমিক ভাবে এর সুত্রপাত করলেও তা পূর্ণতা লাভ
করে লকের হাত ধরে। অর্থাৎ সুসংহত রাজনৈতিক মতবাদরূপে উদাবনীতিবাদের প্রকাশ ঘটে
জনলক-এর চিন্তাধারায়।
হবস ও স্পিনোজাঃ
হবস ও স্পিনোজা ইংল্যান্ডে জ্ঞানদীপ্তির যুগে
উদারনীতিবাদের ভিত্তিভূমি প্রস্তুত করেছিলেন। প্রসঙ্গতঃ বলা যায় যে, এঁরা দুজন কেউই উদারনীতিক তাত্ত্বিক ছিলেননা। তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে,
অজ্ঞতা এবং দাসত্ব মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। স্বাধীনতা অর্জন
করা ও ভোগ করার ইচ্ছা মানুষের মধ্যে তেমনভাবে দেখা যায়না। তাঁদের নিকট মানুষ
প্রধানতঃ স্বার্থপর, আবেগতাড়িত, লোভী,
অজ্ঞ। এইরকম এক প্রেক্ষাপঠে হবস ও স্পিনোজা উদারনীতিবাদের তাত্ত্বিক
ভিত্তি প্রস্তুত করেন। এই কারণে হবস ও স্পিনোজাকে উদারনীতিবাদের অগ্রদূত বলে গণ্য
করা হয়।
হবসের উদারনীতিবাদঃ
ইংরেজ দার্শনিক টমাস হবস তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ
লেভিয়াথান-এ এই যুক্তি দেন যে, ব্যক্তিকে তার নিজের কার্যপদ্ধতি
সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। ব্যক্তি তাঁর ক্ষমতা সমর্পণের মাধ্যমে রাষ্ট্র
গঠন করতে সম্মত হয়েছিল, কারণ এর বিকল্পটি ছিল নৈরাজ্য। হবসের
যুক্তি মনস্তাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে নির্মিত। তিনি জনমঙ্গলের যুক্তিকে
ব্যবহার করেননি। হবসের ব্যক্তি সম্পূর্ণ আধুনিক। তাঁর নিকট সামাজিক অন্যায় সমাধানে
যে কোনোরকম সমষ্টিগত ক্রিয়া অপেক্ষা আত্মস্বার্থ বেশী গ্রহণযোগ্য। জর্জ স্যাবাইন
মন্তব্য করেন যে, সার্বভৌমের চরম ক্ষমতা "তাঁর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের প্রয়োজনীয় উপাদান।" যে যুগে অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় জীবনে সনাতন সঙ্ঘ ও প্রতিষ্ঠানসমূহ ভেঙ্গে
পড়ছে এবং জনগণ মনুষ্যসৃষ্ট আইন কর্তক শাসিত হতে আগ্রহী সেখানে
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের এই তত্ত্ব খুবই স্বাভাবিক। এই প্রবণতা আইনগত ক্ষমতার
বৃদ্ধি ঘটায় এবং জীবনের আধিপত্যকারী উদ্দেশ্যরূপে আত্মস্বার্থের স্বীকৃতি সনাতনী
উদারনীতিবাদের ভিত্তি প্রস্তুতে সাহায্য করে।
স্পিনোজার উদারনীতিবাদঃ
হবসের মতো, সেই সময়কার
ওলন্দাজ দার্শনিক স্পিনোজাকে উদারনীতিবাদের পূর্বসূরী রূপে গণ্য করা যায়। তিনি তাঁর
নৈতিকতাকে স্বতঃসিদ্ধ বক্তব্য হিসাবে উপস্থাপিত করেন যা সহজ, স্পষ্ট এবং স্বতঃসিদ্ধতার ভাষায় প্রকাশ পায়। স্বতঃসিদ্ধ বক্তব্যকে
যুক্তিবাদী অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে ব্যবহার করেন বাস্তবতার চরিত্র ব্যাখ্যা করার
জন্য। তাঁর Ethics ও Political Treatise দুইটি গ্রন্থই ১৬৭৭ সালে তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। তিনি যৌক্তিকতার
সাথে প্রাকৃতিক আইনের স্বপক্ষে তাঁর মত ব্যক্ত করেন। স্পিনোজা তাঁর রাজনৈতিক
তত্ত্বে এই মত ব্যক্ত করেন যে, বলশালী সরকার সু-শাসনে (Good
Government) পরিণত হয়। যখন জোরদার যুক্তিবাহী ভাষায় প্রাকৃতিক
অধিকার এবং তার ব্যবহারিকপ্রয়োগে ব্যবহার করা হয়। তিনি ব্যক্তির আত্মরক্ষার
অধিকারের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। তিনি সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র স্থাপনে আগ্রহী
ছিলেন যা ব্যক্তির স্বাধীন মত, স্বাধীন চিন্তা ও স্বাধীনভাবে
সংগঠিত হওয়ার অধিকারকে রক্ষা করে। হবসের তুলনায় স্পিনোজা উদারনীতিক রাজনীতির বেশি
ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
লকের উদারনীতিবাদঃ
পাশ্চাত্য
রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে জন লক সপ্তদশ শতাব্দী থেকে অষ্টদশ শতাব্দীতে তাঁর
রাষ্ট্রচিন্তার কাঠামো গড়ে তোলেন। তাঁর লেখা দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল অন লিবার্টি এবং
টু ট্রিটিজেস অফ গভর্নমেন্ট।
তাঁর
সমগ্র রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে উদানীতিবাদ সম্পর্কিত ধ্যান-ধারণা ছিল অন্যতম।
লকের মতে উদারনীতিবাদঃ
লকের
উদারনীতিবাদের মূল কথা হল যুক্তিবাদ, সহনশীলতা ও সাংবিধানিক সরকার। সাংবিধানিক সরকার তত্ত্বটি প্রচার করে লক উদারনীতিবাদের
গোড়াপত্তন করে গেছেন। একই সঙ্গে সরকার জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকবে। এই
দায়বদ্ধতাই হল উদারনীতিবাদের প্রধান স্তম্ভ।
প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যঃ
লকের উদারনীতিবাদের
উপরিউক্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে এর নিম্নলিখিত প্রকৃতি বা
বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা যায়। যেমন-
i) ব্যাক্তি স্বাধীনতার ওপর গুরুত্ব আরোপঃ
উদারনীতিবাদের অন্যতম
প্রধান লক্ষণ হল ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর গুরুত্ব আরোপ। লকের মতে স্বাধীনতা হল
মানুষের জন্মগত অধিকার। এই অধিকার সে প্রাক্-রাষ্ট্রীয় সমাজেও যেমন ভোগ করত তেমনি
আবার রাষ্ট্র সৃষ্টির পরও ভোগ করবে। লকের কাছে ব্যক্তিই ছিল প্রধান এবং রাষ্ট্র
কতকগুলি উদ্দেশ্যসাধনের উপায় ছাড়া আর কিছুই ছিল না। রাষ্ট্রসমাজ গঠনের প্রধান
উদ্দেশ্যই ছিল ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা ও
সম্পত্তির অধিকার রক্ষা করা।
ii) রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণঃ
উদারনীতিবাদের অপর
একটি বক্তব্য হল রাষ্ট্রশক্তি সার্বভৌম হলেও তা চরম ও স্বেচ্ছাচারী নয়। লকের
সামাজিক চুক্তি মতবাদে একথাই বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রসমাজ তার সার্বভৌমত্বের জোরে অসীম ও যথেচ্ছ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে
উঠতে পারে না, কারণ ব্যক্তিই হল রাষ্ট্রশক্তির উৎস।
iii) ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিঃ
লকের উদারনীতিবাদের
অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির উপস্থিতি। এই নীতি অনুযায়ী
সরকারের বিভিন্ন বিভাগ স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে তাঁদের কার্যাবলি সম্পাদন করবে।
অর্থাৎ সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজকর্মের ওপর কোনোরকম হস্ত্যক্ষেপ করবেনা।
iv) সম্পত্তি তত্ত্বঃ
লকের উদারনীতিবাদের
একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সম্পত্তি তত্ত্ব। লক্ একদিকে যেমন
ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্য্, মর্যাদা ও অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখাকে
রাষ্ট্রের পবিত্র কর্তব্য বলে ঘোষণা করেছেন, অন্যদিকে তেমনি
রাষ্ট্রকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অতন্দ্র প্রহরী বলে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে,
সম্পত্তির অধিকার হল অ-হস্তান্তরযোগ্য অধিকার। ব্যক্তির জীবন,
স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকারের মধ্যে লক সম্পত্তির অধিকারকেই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। লকের মতে, ব্যাক্তিগত
সম্পত্তি রক্ষার তাগিদে মানুষ প্রকৃতির রাজ্য পরিত্যাগ করে রাষ্ট্রসমাজ গড়ে তুলেছে।
v) বিপ্লবের অধিকারঃ
লক মনে করেন, জনস্বার্থ-বিরোধী সরকারের বিরোধিতা করা জনগণের স্বাভাবিক অধিকার। জীবন, স্বাধীনতা এবং সম্পত্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে জনগণ চুক্তি করে সরকারের প্রতিষ্ঠা করেছে। জনগণের এই উদ্দেশ্যসাধনে সরকার ব্যর্থ হলে, অযোগ্য সরকারকে অপসারণ করে তারা নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অর্থাৎ সীমাবদ্ধ শাসনব্যবস্থার ধারণার মধ্যেই লকের বিপ্লবের অধিকার তত্ত্ব নিহিত রয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ