মানব প্রকৃতি সম্পর্কে লকের ধারণা
ভূমিকাঃ
পাশ্চাত্য
রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে জন লক সপ্তদশ শতাব্দী থেকে অষ্টদশ শতাব্দীতে তাঁর
রাষ্ট্রচিন্তার কাঠামো গড়ে তোলেন। তাঁর লেখা দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল অন লিবার্টি এবং টু ট্রিটিজেস অফ
গভর্নমেন্ট। তাঁর সমগ্র রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে অন্যতম হল মানব প্রকৃতি সম্পর্কে ধারনা
প্রদান।
মানুষের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারনাঃ
মানুষের প্রকৃতি সম্পর্কে
লকের ধারণা তাঁর অ্যান এসে কনসার্নিং হিউম্যান আন্ডারস্ট্যান্ডিং নামক গ্রন্থে
পরিলক্ষিত হয়। হবসের মতো তিনি মানবপ্রকৃতি সম্বন্ধে কোনো হতাশার চিত্র অঙ্কন
করেননি। লক্ মানুষকে যুক্তিবাদী বলে চিহ্নিত করেছেন। কারণ,
মানুষের
ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে যুক্তিই হল প্রধান উপাদান। মানুষ প্রকৃতিগত দিক থেকে
সমান শৃঙ্খলাপরায়ণ ও সমাজমনস্ক। অপরের প্রতি দয়া, মায়া,
মমতা
ও ভালোবাসা দেখাতে সে অভ্যস্ত। লক্ স্বীকার করেন যে, কিছু
লোক অন্যের থেকে একটু বেশি জ্ঞানী বা শক্তিশালী হলেও তাদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য
অপেক্ষা সাদৃশ্যই বেশি লক্ষ করা যায়। মানুষের প্রকৃতি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে হস
বিপরীত মত পোষণ করলেও দু-একটি ক্ষেত্রে লক্ হসকে অনুসরণকে করেছিলেন। হসের মতো লক্ও
মনে করতেন যে, দুঃখ দূর করে সুখ লাভ
করাই হল মানুষের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য। মানুষের সব কর্মপ্রচেষ্টার উৎস
হল আকাঙ্ক্ষা। আকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্তিতে সুখ অনুভূত হয়, আর
তা ব্যাহত হলে দুঃখের সঞ্চার ঘটে। মানবপ্রকৃতি সম্পর্কে এই ধারণাই পরবর্তীকালে
বেত্থাম কর্তৃক গৃহীত হয়। মানব প্রকৃতি সম্পর্কে লকের এই ধারনা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ
করলে নিম্নলিখিত দুটি মূল বিষয়ের কথা উল্লেখ করা যায়। যথা-
প্রথমতঃ
মানুষ যুক্তিবাদী ও
শান্তিপ্রিয়। লক মনে করতেন যে, মানুষের
মধ্যে লোভ ও লালসার উপাদান রয়েছে। তবে মানুষ যুক্তির দ্বারা সেসব কু-প্রবৃত্তি
গুলোকে দমন করে রাখে। তার মতে, প্রকৃতির
রাজ্যে মানুষ প্রাকৃতিক আইন মেনে চলত এবং শান্তির অন্বেষায় প্রাকৃতিক আইনের
দ্বারা পরিচালিত হতো। তিনি বলেন যে, ‘মানুষ
শুধু যুক্তিবাদী নয় বরং নৈতিক প্রাণীও বটে।'
দ্বিতীয়তঃ
লকের মতে,
মানুষ
স্বভাবত সমান। তিনি বলেন, মানুষের
মধ্যে হয়ত কেউ বেশি জ্ঞানী কেউ কম জ্ঞানী, কেউ
সবল কেউ দূর্বল, কিন্তু এসব পার্থক্য
তাদের সাদৃশ্যের তুলনায় নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর। তাছাড়া, তিনি
বেশ নিশ্চিত ভাবেই বিশ্বাস করেন যে, মানুষের
এসব বৈপরীত্যের অধিকাংশই কৃত্রিম অর্থাৎ মানুষের নিজের হাতে তৈরি। তার মতে
প্রত্যেকটি শিশু সাদা কাগজের মতো পরিষ্কার মন নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। পরে সে যেরকম
পরিবেশের মধ্যে লালিত-পালিত হয় ঠিক সে পরিবেশ অনুসারে তার চরিত্র ও মানসিকতা গড়ে
ওঠে।
মূল্যায়নঃ
হসের চিন্তার সঙ্গে কিছু সাদৃশ্য থাকলেও মানবপ্রকৃতি সম্পর্কে লকের ধারণা হবসের ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। হবস যেখানে অহংসর্বস্ব, কলহপরায়ণ ও ক্ষমতালিপ্সু মানুষের চরিত্র চিত্রণ করেছেন, লক্ সেখানে মানুষকে স্বভাবগতভাবে নৈতিক, সামাজিক ও শান্তিপ্রিয় বলে চিহ্নিত করেছেন। মানুষের স্বভাব সম্বন্ধে লকের ধারণা স্টোয়িক স্বর্ণযুগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। লকের মতে, স্বাভাবিক আইনের অধীনে প্রতিটি মানুষই সমানভাবে স্বাধীনতার অধিকার ভোগ করত। মানুষের স্বাভাবিক অবস্থা হল- অপরের ইচ্ছার ওপর নির্ভর না করে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করা। মানুষের সহিতা, সামাজিকতা ও যুক্তিকে লক্ স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। হস মানুষের জৈবিক প্রবৃত্তিকে মুখ হিসেবে দেখেছেন বলেই তাঁর কাছে মানুষ ছিল প্রকৃতির ক্রীড়নক। কিন্তু লক্ মানুষকে দেখেছেন নৈতিক জগতের বাসিন্দা হিসেবে। কাজেই মানুষ তাঁর কাছে অহংসর্বস্ব স্বার্থপর মানুষ নয়। সে অপরের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন ও কর্তব্যপরায়ণ। প্রকৃতি সম্পর্কে মানুষের এরূপ ধারণার ওপর ভিত্তি করেই লক্ প্রকৃতির রাজ্যকে এক সুনিবিড় শান্তির জগৎ বলে বর্ণনা করেছেন।
লেখক
জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ
এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস
(বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সহ)
যে প্রশ্নের উত্তর দরকার
সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।
উত্তর পেয়ে যাবে-
২) প্লেটো কীভাবে ন্যায়ের ধারণাটি ব্যাখ্যা করেছেন? ৫(২০১৯)
৩) প্লেটোর ন্যায়বিচার তত্ত্বটি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)
৪) প্লেটোর ন্যায়বিচার তত্ত্বটি সমালোচনাসহ বিশ্লেষণ করো। ১০ (২০২২)
২) প্লেটো কীভাবে ন্যায়ের ধারণাটি ব্যাখ্যা করেছেন? ৫(২০১৯)
0 মন্তব্যসমূহ