জন লকের সম্মতি তত্ত্ব; john locke theory of consent

Ad Code

জন লকের সম্মতি তত্ত্ব; john locke theory of consent

 জন লকের সম্মতি তত্ত্ব


ভূমিকাঃ

পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে জন লক সপ্তদশ শতাব্দী থেকে অষ্টদশ শতাব্দীতে তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার কাঠামো গড়ে তোলেন। তাঁর লেখা দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল অন লিবার্টি  এবং টু ট্রিটিজেস অফ গভর্নমেন্ট। তাঁর সমগ্র রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে অন্যতম হল সম্মতি তত্ত্ব।

জন লকের মতে সম্মতিঃ

সাধারনভাবে সম্মতি বলতে কোনকিছু করার বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে হ্যাঁ বা না বাচক মনোভাবকে বোঝায়। লক সম্মতি তত্ত্বটিকে তাঁর রাষ্ট্রদর্শনে রাষ্ট্র ও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে শাসিত জনগণের হ্যাঁ বা না সূচক মনোভাব প্রকাশের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা করেছেন। লকের মতে, প্রকৃতির রাজ্যের কিছু স্বার্থপর মানুষ অন্য মানুষদেরকে তাদের বিভিন্ন অধিকার ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করত। এই কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বঞ্চনার হাত থেকে পরিত্রাণ লাভের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র গঠন ও প্রাকৃতিক অধিকারের প্রশ্নে সম্মতি প্রদান করে। লক সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, শাসিত জনগণের সম্মতি ছাড়া শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত কোন সরকারই বৈধ নয়। তিনি আরও বলেছেন, একমাত্র শাসিতের সম্মতিই সরকারকে বৈধ করে তোলে এবং এটাই রাজনৈতিক আনুগত্যের একমাত্র ভিত্তি হওয়া উচিৎ।

সম্মতি তত্ত্বের প্রকারভেদঃ

জন লক তাঁর সম্মতি তত্ত্বকে দু’ভাগে ভাগ করে আলোচনা করেছেন। যথা-

ক) প্রকাশ্য সম্মতি এবং

খ) অপ্রকাশ্য বা মৌন সম্মতি।

ক) প্রকাশ্য সম্মতিঃ

যে সম্মতির মাধ্যমে মানুষ রাষ্ট্র বা সরকার গঠন করে তাকে প্রকাশ্য সম্মতি বলা হয়। প্রকৃতির রাজ্যের অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিংবা প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ সম্পত্তির যে অধিকার ভোগ করে সে অধিকারকে নিশ্চিত বা নিরাপদ করার জন্য জনগণ রাষ্ট্র বা সরকারের উদ্দেশ্যে এই সম্মতি প্রদান করে।

খ) অপ্রকাশ্য বা মৌন সম্মতিঃ

জন লকের সম্মতি তত্ত্বের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ভাগ হল অপ্রকাশ্য বা মৌন সম্মতি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা সরকারের প্রতি জনগণের সম্মতি অপ্রকাশ্য অবস্থায় থাকে। এক্ষেত্রে সম্মতি দাতা অনেকসময় বুঝতেই পারেনা তার সম্মতি প্রদানের কথা। লকের মতে, মৌন সম্মতির উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র মানুষের যে কোন অধিকারকে স্পর্শ করতে পারে।

লকের সম্মতি তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যঃ

জন লকের সম্মতি তত্ত্বের উপরিউক্ত ব্যাখা-বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে এর নিম্নলিখিত প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন-

১) নাগরিকের মতামতঃ

লকের সম্মতি তত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল নাগরিকের সম্মতি বা মতামত। নাগরিকের সম্মতি ছাড়া রাষ্ট্র কোনো কল্যাণমূলম কাজকর্ম করতে পারেনা। লকের মতে, যে সরকার নাগরিকদের এই সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত নয়, সে সরকার কখনই নাগরিকদের আনুগত্য দাবি করতে পারেনা।

২) স্বৈারাচার বা স্বেচ্ছাচারের অবসানঃ

জন লক তাঁর সম্মতি তত্ত্বের মাধ্যমে চরম রাজতন্ত্র ও স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটাতে চেয়েছিলেন। ব্যাক্তি বা মালিকের সম্মতি ছাড়া তাঁর সম্পত্তির উপর কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করা যাবেনা অথবা জনগণের সম্মতি ছাড়া রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপিত হবেনা ইত্যাদি কথাগুলো বলে লক স্বৈরাচারী রাজার বিরুদ্ধে তাঁর বিদ্রোহী মনোভাব ব্যাক্ত করেছিলেন। সমস্ত প্রকার স্বৈরাচারিতাকে তিনি ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থি বলে ঘোষণা করেছেন।

৩)  চিরস্থায়ী বন্ধনঃ

জন লকের সম্মতি তত্ত্বের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিক হল চিরস্থায়ী বন্ধন। এই  চিরস্থায়ী বন্ধন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন যে, “যারা প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠনের সম্মতি প্রদান করেছে তারা চিরস্থায়ী ও অপরিহার্যভাবে রাষ্ট্রের সাথে আনুগত্যের বন্ধনে আবদ্ধ।”

৪) সম্পত্তি ভোগঃ

লকের মতে সম্পত্তি ভোগের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মতি আবশ্যক। যারা রাষ্ট্রীয় অধীনে সম্পত্তি ভোগ করে তারা সম্মতি প্রদানের মাধ্যমেই তা করে থাকে। কেননা, সম্মতি প্রদান না করলে তার কাছ থেকে রাষ্ট্র বা সরকার কোন আনুগত্য দাবি করতে পারেনা। অর্থাৎ সম্পত্তি ভোগের মাধ্যমে জনগণ সরকারের প্রতি সম্মতি প্রদান করে।

৫) প্রকাশ্যতাঃ

প্রকাশ্যতা জন লকের সম্মতি তত্ত্বের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। জন লক জনগণকে প্রকাশ্যভাবে রাষ্ট্রের প্রতি তাদের মতামত বা সম্মতি প্রদানের পরামর্শ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে জনগণ তার প্রয়োজন অনুযায়ী সরকারের প্রতি প্রকাশ্য সম্মতি প্রদান করতে পারবে।

৬) প্রাকৃতিক অধিকারঃ

জন লকের সম্মতি তত্ত্বের সর্বাপেক্ষা প্রতিফলন ঘটেছে প্রাকৃতিক অধিকারের ক্ষেত্রে। লক সম্মতিকে “জনগণের প্রাকৃতিক অধিকার” বলে চিহ্নিত করেছেন। এজন্য জীবন, সম্পত্তি ও স্বাধীনতাকে তিনি প্রাকৃতিক অধিকার বলে চিহ্নিত করেছেন। 

৭)  রাজনৈতিক অধিকারঃ

জন লক সম্মতি তত্ত্বকে একটি রাজনৈতিক অধিকার হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন। কারন সম্মতির অধিকার প্রকারে মাধ্যমে রাজনৈতিক অধিকারকে সংরক্ষণ করা যায়।

মূল্যায়নঃ

        লকের সম্মতি তত্ত্বের ধারনার বিভিন্ন দুর্বলতাও বর্তমান। লক্ মনে করতেন যে, রাষ্ট্রশাসকের প্রতি জনগণের আনুগত্য নিঃশর্ত হয় না। সরকারের কাছে থেকে মানুষ যে-কোনো সময় তার আনুগত্য প্রত্যাহার করে নিতে পারে। লক্ আইনসভাকে তাৎক্ষণিক সার্বভৌম বলে চিহ্নিত করলেও তাকে স্থায়ীভাবে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে করেননি। তাঁর কাছে আইনসভা একটি আস্থাভাজন সংস্থা ছাড়া আর কিছু ছিল না। স্থায়ীভাবে চরম ক্ষমতা থাকবে জনগণের হাতে। তাই লক্ বলেছেন যে, রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ যদি ব্যক্তির অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ এবং জনস্বার্থ পুরণে অক্ষম হয়, তাহলে জনসাধারণ সংগতভাবেই তাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। এই অধিকার প্রয়োগের দ্বারা তারা প্রতিষ্ঠিত আইনসভাকে ভেঙে দিয়ে নতুন আইনসভা গঠন করতে পারবে।

লেখক

জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ


এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস


(বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সহ)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


Main Menu


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code