লকের প্রাকৃতিক অধিকার; john locke natural rights

Ad Code

লকের প্রাকৃতিক অধিকার; john locke natural rights

লকের প্রাকৃতিক অধিকার


ভূমিকাঃ

পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে জন লক সপ্তদশ শতাব্দী থেকে অষ্টদশ শতাব্দীতে তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার কাঠামো গড়ে তোলেন। তাঁর লেখা দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল অন লিবার্টি  এবং টু ট্রিটিজেস অফ গভর্নমেন্ট। তাঁর সমগ্র রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে প্রাকৃতিক অধিকার ছিল অন্যতম।


লকের মতে প্রাকৃতিক অধিকারঃ

লকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী মানুষ জন্মানোর সাথে সাথে তার জীবনের উপলব্ধির জন্য অহস্তান্তর যোগ্য কতকগুলি অধিকার ভোগ করে। এগুলিই হল স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক অধিকার। লক বর্ণিত প্রকৃতির রাজ্যে এই অধিকারগুলি সহজাত। এগুলি হল সাম্যের অধিকার, জীবনের অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার। 

সাম্যের অধিকারঃ

স্বাভাবিক অধিকারগুলির মধ্যে অন্যতম সাম্যের অধিকার। লকের মতে, সাম্যের অধিকার বলতে প্রত্যেকেই প্রকৃতির অধিকার ও স্বাধীনতা অন্য কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ভোগ করতে পারবে।

জীবনের অধিকারঃ 

লকের ব্যাখ্যায় জীবনের অধিকার অন্যতম স্বাভাবিক অধিকার যা ঈশ্বর ব্যতীত কেউ খর্ব করতে পারবে না। লকের মতে কোন ব্যক্তি যেমন অন্যের জীবনের অধিকার হরণ করতে পারে না তেমনি নিজের জীবনও নষ্ট করতে পারে না।

স্বাস্থ্যের অধিকারঃ

লক স্বাস্থ্যের অধিকারকেও অন্যতম স্বাভাবিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। লক উল্লেখ করেন, প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করার অধিকার ভোগ করবে। জীবনের অধিকারের সাথে সাথে জীবনভোগের অধিকারকেই লক স্বীকৃতি দিয়েছেন। 

স্বাধীনতার অধিকারঃ

লক ব্যক্তি বা মানুষের অপর একটি স্বাভাবিক অধিকারের কথা উল্লেখ করেন তা হল স্বাধীনতার অধিকার। লকের মতে প্রকৃতির রাজ্যে একমাত্র প্রাকৃতিক আইন ব্যতীত মানুষ সকল কিছুই ক্রয় বিক্রয় করতে পারত। 

সম্পত্তির অধিকারঃ

ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারকে স্বাভাবিক অধিকার হিসেবে লক বর্ণনা করেন। তাঁর মতে মানুষ তার শ্রমের দ্বারাই প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করেন।লকের মতে, সকল মানুষ প্রকৃতিগত ভাবেই সমান অবস্থায় প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারী। লক সম্পত্তির অধিকারের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। 


প্রাকৃতিক অধিকারের বৈশিষ্ট্যসমূহ

লকের  প্রাকৃতিক অধিকারের উপরিউক্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে এর নিম্নলিখিত  কয়েকটি প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন- 

প্রথমত, এইসব অধিকার ছিল সহজাত এবং ঈশ্বর ও প্রকৃতি-প্রদত্ত।মানুষ যে-কোনো অবস্থাতেই এগুলি ভোগ করার অধিকারী। প্রকৃতির রাজ্যেও মানুষ এগুলি ভোগ করত এবং পুরসমাজেও একইভাবে এগুলির অস্তিত্ব থাকে। 

দ্বিতীয়ত, যেহেতু প্রাকৃতিক অধিকারগুলি হল ব্যক্তিগত অধিকার, সেহেতু এগুলি সকলে সমানভাবে ভোগ করে। এদিক থেকে প্রাকৃতিক অধিকারগুলিকে সাম্যের নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে মনে করা হয়। 

তৃতীয়ত, এই অধিকারগুলি কেবল ব্যক্তির অধিকার, সরকারের নয়। 

চতুর্থত, রাষ্ট্রের উচিত বলপ্রয়োগের মাধ্যমে প্রাকৃতিক অধিকারগুলিকে সংরক্ষণ এবং আইনগতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা। কারণ, এগুলিকে রক্ষা করার জন্যই মানুষ চুক্তি করে রাষ্ট্র গঠন এবং রাষ্ট্রের হাতে এগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অর্পণ করেছিল। 

এইভাবে লকের ব্যক্তিস্বাতহাবাদী তত্ত্ব প্রাকৃতিক অধিকারের ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত। ডানিং যথার্থই বলেছেন যে, রাষ্ট্রনৈতিক তত্ত্বে লকের গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল তাঁর প্রাকৃতিক অধিকারের তত্ত্ব।


মূল্যায়নঃ

    লকের প্রাকৃতিক অধিকারের ধারনা ত্রুটিমুক্ত ছিলোনা। অনেকের মতে , লক্ তাঁর প্রাকৃতিক অধিকারের তত্ত্বকে ভুল ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠা করেছেন। কারণ, প্রাক্ -রাষ্ট্রনৈতিক পরিবেশে অধিকারের কোনো অস্তিত্বই থাকতে পারে না। অধিকারের একটি সামাজিক প্রকৃতি রয়েছে। তাই ব্যক্তির অধিকারকে বিচ্ছিন্নভাবে বিশ্লেষণ করা যায় না। তবে এসব দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও লকের প্রাকৃতিক অধিকারের তত্ত্বের গুরুত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায়না। তার এই প্রাকৃতিক অধিকারের ধারনার মাধ্যমে ব্যাক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদী ধারনা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

লেখক

জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ

এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস


(বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সহ)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


Main Menu


Main Menu


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code