হবসের প্রকৃতির রাজ্য; hobbes' state of nature

Ad Code

হবসের প্রকৃতির রাজ্য; hobbes' state of nature

হবসের প্রকৃতির রাজ্য


ভূমিকাঃ

হবসের সামাজিক চুক্তি মতবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল প্রকৃতির রাজ্য হবসের ধারণায় সমাজ গঠনের আগে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বসবাস করত। প্রকৃতির এই রাজ্য ছিল ভয়াবহ এবং অসহনীয়। এই প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত থাকত। বলবান দুর্বলদের পরাজিত করত।

প্রকৃতির রাজ্যের বর্ণনাঃ

প্রকৃতির রাজ্য' সম্পর্কে হবস যে মতবাদ দিয়েছেন তা মানব প্রকৃতি সম্পর্কিত তার ধারণারই অবশ্যম্ভাবী ফলশ্রুতি। মানুষকে স্বভাবত স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক ও লোভী বলে তিনি সেভাবে চিত্রিত করেছেন তার প্রকৃতির রাজ্যে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। তার এই প্রকৃতির রাজ্যের ধারনাটির নিম্নলিখিত বর্ণনাগুলি দেওয়া যায়। যেমন-

১) প্রাক্-সামাজিক এবং প্রাক্-রাজনৈতিকঃ

হসের মতে, প্রকৃতির রাজ্য ছিল প্রাক্-সামাজিক এবং প্রাক্-রাজনৈতিক। এখানে মানুষের জীবন ভয়াবহ ও অসহনীয় ছিল। ওই অবস্থায় মানুষ যুক্তি বা বুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হত না; আকাঙ্ক্ষা এবং আবেগের বশবর্তী হয়ে সে কাজ করত। প্রাক্ সামাজিক অবস্থায় মানুষ ছিল হিংস্র ও স্বার্থপর। তাঁর মতে, প্রাক্-সামাজিক অবস্থায় মানুষের মধ্যে ন্যায়-অন্যায় বোধ বলে কিছু ছিল না। মানুষের স্বার্থান্বেষী মনোভাব ও কলহপ্রিয়তা জঙ্গলের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল।

২) ন্যায়-অন্যায় বর্জিত অবস্থাঃ

প্রকৃতির রাজ্যে প্রত্যেকে প্রত্যেকেরই শত্রু ছিল। তারা সর্বক্ষণ দ্বন্দ্ব-কলহ, খুন-খারাবি ইত্যাদিতে লিপ্ত ছিল। এরকম ভয়াবহ যুদ্ধাবস্থা সেখানে সব সময়ই বিরাজ করত। এরূপ ভয়ঙ্কর অবস্থায় মানুষের বুদ্ধি বিবেকের চর্চা, যুক্তিকে কাজে লাগানোর অবকাশ একদম ছিলনা। ফলে ন্যায়-অন্যায়বোধ তখনও মানুষের মধ্যে ঘটেনি। হবসের মতে, যেখানে সাধারণ ক্ষমতা নেই, সেখানে আইন নেই, সেখানে বিচারও নেই। অর্থাৎ প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ বন্য পশুদের মত জীবনযাপন করত।

৩) অসামাজিক ব্যবস্থাঃ

হবসের মতে প্রকৃতির রাজ্যে কোন সমাজব্যবস্থা বা রাজনৈতিক সংগঠন ছিলনা। কাজেই নিয়মশৃঙ্খলার অভাবে মানুষ সেখানে অসভ্য ও বর্বর জীবনযাপন করত। জীবনের নিশ্চয়তা বা সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের কোন ব্যবস্থা সেখানে ছিলনা। প্রত্যেক মানুষই যেহেতু স্বার্থপর ও লোভী, সেহেতু প্রত্যেকেই নিজ স্বার্থ ও লোভ চরিতার্থ করতেই ব্যস্ত ছিল। অর্থাৎ এক সম্পুর্ণ অসামাজিক বন্য ব্যবস্থার মধ্যে মানুষ বসবাস করতো।

৪) মানুষের নিষ্ঠুর, নিঃসঙ্গ বন্য জীবনঃ

হবস্ বর্ণিত প্রকৃতির রাজ্যে মানুষের জীবন ছিল পশুতুল্য। তখন কেবল সমাজ বা রাজনৈতিক সংগঠন ছিলনা। নিয়মশৃঙ্খলার অভাবে মানুষ সেখানে অসভ্য ও বর্বরের ন্যায় জীবনযাপন করত। নিশ্চয়তাবিহীন জীবনে মানুষ একে অপরকে সন্দেহ করত বলে তাদের নিঃসঙ্গ, নিষ্ঠুর জীবনযাপন করতে হয়।  ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে কোনো সামাজিক ব্যবস্থা বা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠা সম্ভব ছিলোনা।

৫) উইলিয়ামের ধারণাঃ

হবস বর্ণিত ‘প্রকৃতির রাজ্যের' বাস্তব অস্তিত্ব সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে উইলিয়াম ম্যাকগর্ভান বলেন, এই ‘প্রকৃতির রাজ্য' শুধু যে মানব জাতির শৈশব লগ্নে প্রচলিত ছিল তাই নয়, আধুনিক কালের বর্বর জাতীয় লোকদের মধ্যেও এর অস্তিত্ব বিরাজমান।

মূল্যায়নঃ

        প্রকৃতির রাজ্যের নৈরাশ্যজনক অবস্থার যে-চিত্র হস এঁকেছেন, তা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, ওই অবস্থা বর্ণনার নেপথ্যে সপ্তদশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডের পিউরিটান বিপ্লবজনিত ভীতি এবং ক্রমওয়েলীয় প্রজাতন্ত্রের প্রতি অবিশ্বাস কাজ করেছে। তবে প্রকৃতির রাজ্যের বাস্তব অস্তিত্ব নিয়ে তাঁর কোনো মাথাব্যথা ছিল না। এটি ছিল তাঁর অনুমিত প্রকল্প। তিনি তাঁর কোনো সিদ্ধান্তকে ইতিহাসের কষ্টিপাথরে পরীক্ষা করে দেখেননি। যুক্তিবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি প্রাকৃতিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরেছেন মাত্র। তাঁর মতে, প্রকৃতির রাজ্যে কেবল রাষ্ট্র বা সরকার ছিল না তা-ই নয়, প্রকৃত সমাজজীবনেরও কোনো চিহ্ন ছিল না। তাই তিনি সামাজিক শৃঙ্খলাবহির্ভূত মানুষের চিত্র অঙ্কন করেছেন। হসস-বর্ণিত প্রকৃতির রাজ্যের ঐতিহাসিক অস্তিত্ব নিয়ে নিশ্চিতভাবেই প্রশ্ন তোলা যেতে পারে।

লেখক

জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ


এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস


(বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সহ)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


Main Menu


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code