হবসের সার্বভৌমিকতা; hobbes concept of sovereignty

Ad Code

হবসের সার্বভৌমিকতা; hobbes concept of sovereignty

হবসের সার্বভৌমিকতা



ভূমিকাঃ

পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে টমাস হবস ষোড়শ শতাব্দী থেকে সপ্তদশ শতাব্দীতে তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার কাঠামো গড়ে তোলেন। তাঁর লেখা দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল-Leviathan  এবং The elements of Lawsতাঁর সমগ্র রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে সার্বভৌমিকতা সম্পর্কিত ধ্যান-ধারণা ছিল অন্যতম।


হবসের মতে সার্বভৌমিকতাঃ

হবসের মতে, সার্বভৌমিকতা হল রাষ্ট্রনৈতিক প্রক্রিয়ার ফল। তিনি বলেছেন যে, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ চুক্তির মাধ্যমে যে-ব্যক্তি বা সংসদের হাতে নিজেদের সব ক্ষমতা তুলে দিয়েছিল, সেই ব্যাক্তি বা সংসদই হল সার্বভৌম।" হবস উপলব্ধি করেছিলেন যে, সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ব্যাপক ক্ষমতাসম্পন্ন সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ স্থাপন করা প্রয়োজন। সার্বভৌম শক্তিকে প্রকৃতির রাজ্যের মানুষের চুক্তির ফসল বলে চিহ্নিত করা যায়। এই শক্তি হল সমগ্র কমনওয়েলথের প্রতীক।

সার্বভৌমিকতার প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যঃ

হবসের সার্বভৌমতার তত্ত্বটি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করলে এর নিম্নলিখিত প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায়। যেমন-

i) চরম বা চুড়ান্ত ক্ষমতাঃ

        হবসের মতে, সার্বভৌম ক্ষমতা হল চরম বা চুড়ান্ত ক্ষমতা। কারন এর ওপর আর কোনো ক্ষমতা বা কর্তৃপক্ষ থাকতে পারেনা। রাষ্ট্রের মধ্যে অবস্থিত সকল ব্যাক্তি, গোষ্ঠি বা সংগঠন সার্বভৌমের নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য।

ii) অবাধ ক্ষমতাঃ

হবসের সার্বভৌম ক্ষমতাকে অবাধ ক্ষমতা বলেছেন। কারন এর ওপর কোনো বাধা-নিষেধ আরোপ করা যায়না। এমনকি প্রাকৃতিক আইন বা স্বাভাবিক আইন দ্বারাও একে নিয়ন্ত্রণ করা যাবেনা।

iii) অসীম ক্ষমতাঃ

হবসের মতে, সার্বভৌম ক্ষমতা হল রাষ্ট্রের অসীম ক্ষমতা। কারন এর কোনো সীমা বা শেষ নেই। রাষ্ট্র যতখুশি নাগরিক বা সংগঠনের ওপর এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।

iv) অবিভাজ্য ক্ষমতাঃ

        হবসের সার্বভৌম ক্ষমতা হল অবিভাজ্য ক্ষমতা। কারন এই ক্ষমতাকে ভাগ করা যায়না। একমাত্র রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ এই ক্ষমতা ভোগ করে। রাষ্ট্রের মধ্যে অবস্থিত অন্যান্য কর্তৃপক্ষের হাতে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকেনা।

v) অহস্তান্তরযোগ্য ক্ষমতাঃ

        হবসের মতে, সার্বভৌম ক্ষমতা হল অহস্তান্তরযোগ্য ক্ষমতা। কারন এই ক্ষমতাকে এক কর্তৃপক্ষের হাত থেকে অন্য কর্তৃপক্ষের হাতে অর্পণ করা যায়না। একমাত্র রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ এই ক্ষমতা গ্রহন ও তার প্রয়োগ করে।

vi) চুক্তির উর্দ্ধে সার্বভৌমের অবস্থানঃ

        হবসের সার্বভৌমিকতা চুক্তির ঊর্ধ্বে অবস্থিত। কারণ, চুক্তি হয়েছিল কেবল জনগণের নিজেদের মধ্যে, সার্বভৌমের সঙ্গে নয়। সার্বভৌমের সঙ্গে চুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। তাই সার্বভৌমের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ আনা যায় না।

vii) সার্বভৌমের বিরুদ্ধাচরনঃ

        হবসের সার্বভৌমত্ব যেহেতু নিরঙ্কুশ, সেহেতু তা প্রতিরোধের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে। সার্বভৌম চুক্তির ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে সাধারণভাবে জনগণের কোনো প্রতিবাদ বা আন্দোলন কোনোভাবেই ন্যায়সংগত হতে পারেনা। তবে সার্বভৌম যখন জনজীবনে নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।

সমালোচনাঃ

হবসের সার্বভৌম তত্ত্ব বিভিন্ন সময়ে প্রশংসিত হলেও তার কিছু  দুর্বলতাও রয়েছে। নীচে হবসের সার্বভৌমিকতার ধরনার সমালোচনাগুলি উল্লেখ করা হল-

i) চরম বা চুড়ান্ত ক্ষমতাঃ

        বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে কোনো রাষ্ট্রই চরম বা চুড়ান্ত ক্ষমতা দাবী করতে পারেনা। কারন বর্তমানে প্রতিটি রাষ্ট্রকেই আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অনুগত্য প্রদর্শন করতে হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বানিজ্যের জন্য প্রতিটি রাষ্ট্র একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল।

ii) অবাধ ক্ষমতাঃ

        সার্বভৌম ক্ষমতা কখনো অবাধ ক্ষমতা হতে পারেনা। কারন কোনো বাধানিষেধ না থাকলে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ স্বৈরাচারী হয়ে পড়বে। বর্তমানে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিটি ক্ষমতা বা অধিকারের ওপর বিভিন্ন বাধানিষেধ আরোপ করা হয়।

iii) অসীম ক্ষমতাঃ

        সার্বভৌম ক্ষমতা কখনো অসীম বা নিরন্তর হতে পারেনা। প্রতিটি দেশ বা রাষ্ট্র কখন কি পরিমান সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করবে তা সেই দেশের সংবিধান বা শাসনতন্ত্রে লিপিবদ্ধ থাকে।

iv) অবিভাজ্য ক্ষমতাঃ

সার্বভৌম ক্ষমতা কখনো অবিভাজ্য হতে পারেনা। কারন রাষ্ট্রের মধ্যে অবস্থিত অন্যান্য সংঘ-সমিতি বা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের মতই গুরুত্বপুর্ণ তাই এগুলির হাতেও সার্বভৌম ক্ষমতা ক্ষমতা থাকা উচিৎ। 

v) অহস্তান্তরযোগ্য ক্ষমতাঃ

        সার্বভৌম ক্ষমতা অহস্তান্তরযোগ্য নয়। কারন সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্রের হাতে ন্যস্ত থাকলেও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসাবে সরকার এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এই সরকার একটি নিদিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হয়। ফলে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে সার্বভৌম ক্ষমতারও হস্তান্তর ঘটে।

vi) একতরফা চুক্তিঃ 

হবসের সার্বভৌম চুক্তিতে রাজা কোনভাবেই অংশগ্রহণ করেন না। ফলে এটি একতরফা চুক্তিতে পরিণত হয়েছে। অথচ চুক্তি কখনও একতরফা হতে পারে না। বর্তমানেও আমরা রাষ্ট্রীয় চুক্তিতে লক্ষ্য করি যে, চুক্তি সবসময় দ্বিপাক্ষিক অথবা বহুপাক্ষিক হয়ে থাকে।

vii) স্বৈরাচারের নামান্তরঃ

হবসের সার্বভৌম চুক্তির ফলে রাজা জনগণের নিকট কোন জবাবদিহিতা করতে বাধ্য নন, তাই সার্বভৌম শাসক অতি দ্রুত স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। এভাবে হবস তার সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে তৎকালীন ইংল্যান্ডের স্টুয়াট রাজাদের স্বেচ্ছাচারী শাসনের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন।

মূল্যায়নঃ

হবসের সার্বভৌমিকতার বিরুদ্ধে উপরিউক্ত সমালোচনাগুলি উল্লেখ করা হলেও এর গুরুত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায়না। কারন হবস সার্বভৌম শক্তির মাধ্যমে আইন-শৃংখলা ও প্রজাগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন। তাই এটা তার গণতান্ত্রিক মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ।

লেখক

জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ

এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস


(বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সহ)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


Main Menu


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code