সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী ধারণা

Ad Code

সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী ধারণা



প্রশ্ন-১; রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী তত্ত্বটি আলোচনাকর ১০ (২০২০) ১০ (২০২১)  

উত্তরঃ 


মূল বক্তব্য ও সংজ্ঞাঃ

সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী মতবাদ অনুযায়ী সার্বভৌমিকতা চরম বা চুড়ান্ত, অবাধ, অসীম ও অবিভাজ্য নয়।  শুধু রাষ্ট্র হল এই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নয়। রাষ্ট্র তার এলাকার সকল ব্যক্তি, গোষ্ঠি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর অপ্রতিহত বা চরম ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে না।

সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী তত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রবক্তারা হলেন- ম্যাকাইভার, গিয়ার্কে ও মেইটল্যান্ড, ম্যাবট, লিন্ডসে প্রমুখ।

ম্যাকাইভার এর মতে, রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বেই মানুষ একাধিক সামাজিক সংগঠনের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করেছে। রাষ্ট্র ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পৃথক অস্তিত্ব রয়েছে। মানুষের স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে এই সমস্ত সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ব্যক্তির বিকাশে সহায়তা করে। সুতরাং, রাষ্ট্র এককভাবে মানুষের ওপর কর্তৃত্ব দাবি করতে পারে না।

গিয়ার্কে ও মেইটল্যান্ড এর মতে, সমাজের স্থায়ী সংগঠনগুলি স্বাভাবিকভাবেই গড়ে উঠে। রাষ্ট্র এগুলিকে সৃষ্টি করেনি। তাই রাষ্ট্র যুক্তিসঙ্গতভাবে এদের উপর পুরোপুরি কর্তৃত্ব করতে পারে না। এই সংঘগুলিও রাষ্ট্রের মত সার্বভৌম।

লিন্ডসে এর মতে, বাস্তব ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের চরমত্বের ধারণার গুরুত্ব আর নেই।

ম্যাবট এর মতে, রাষ্ট্র সর্বশক্তিমান ও অবাধ ক্ষমতার অধিকারী হলে ব্যক্তিস্বাধীনতা বিপর্যস্ত হবে এবং সমাজের অন্যান্য সংঘসমূহের স্বাভাবিক অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।

প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যঃ

        সার্বভৌমিকতার উপরিউক্ত সংজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে এর নিম্নলিখিত প্রকৃতি বা বৈশিষ্টগুলি উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন-

i) চরম বা চুড়ান্ত নয়ঃ

        বহুত্ববাদীদের মতে, বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে কোনো রাষ্ট্রই চরম বা চুড়ান্ত ক্ষমতা দাবী করতে পারেনা। কারন বর্তমানে প্রতিটি রাষ্ট্রকেই আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অনুগত্য প্রদর্শন করতে হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বানিজ্যের জন্য প্রতিটি রাষ্ট্র একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল।

ii) অবাধ নয়ঃ

        বহুত্ববাদীদের মতে, সার্বভৌম ক্ষমতা কখনো অবাধ ক্ষমতা হতে পারেনা। কারন কোনো বাধানিষেধ না থাকলে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ স্বৈরাচারী হয়ে পড়বে। বর্তমানে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিটি ক্ষমতা বা অধিকারের ওপর বিভিন্ন বাধানিষেধ আরোপ করা হয়।

iii) অসীম নয়ঃ

        বহুত্ববাদীদের মতে, সার্বভৌম ক্ষমতা কখনো অসীম বা নিরন্তর হতে পারেনা। প্রতিটি দেশ বা রাষ্ট্র কখন কি পরিমান সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করবে তা সেই দেশের সংবিধান বা শাসনতন্ত্রে লিপিবদ্ধ থাকে।

iv) অবিভাজ্য নয়ঃ

বহুত্ববাদীদের মতে, সার্বভৌম ক্ষমতা কখনো অবিভাজ্য হতে পারেনা। কারন রাষ্ট্রের মধ্যে অবস্থিত অন্যান্য সংঘ-সমিতি বা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের মতই গুরুত্বপুর্ণ তাই এগুলির হাতেও সার্বভৌম ক্ষমতা ক্ষমতা থাকা উচিৎ। 

v) অহস্তান্তরযোগ্য নয়ঃ

        বহুত্ববাদীদের মতে, সার্বভৌম ক্ষমতা অহস্তান্তরযোগ্য নয়। কারন সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্রের হাতে ন্যস্ত থাকলেও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসাবে সরকার এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এই সরকার একটি নিদিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হয়। ফলে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে সার্বভৌম ক্ষমতারও হস্তান্তর ঘটে।

সমালোচনাঃ

        সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী ধারনা বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে। যেমন-

i) চরম বা চুড়ান্ত ক্ষমতাঃ

        সার্বভৌম ক্ষমতা হল চরম বা চুড়ান্ত ক্ষমতা। কারন তা না হলে তা আর সার্বভৌম হবেনা। সার্বভৌম ক্ষমতার ওপর আর কোনো ক্ষমতা বা কর্তৃপক্ষ থাকতে পারেনা। রাষ্ট্রের মধ্যে অবস্থিত সকল ব্যাক্তি, গোষ্ঠি বা সংগঠন সার্বভৌমের নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য।

ii) অবাধ ক্ষমতাঃ

সার্বভৌম ক্ষমতা হল অবাধ ক্ষমতা। কারন এর ওপর কোনো বাধা-নিষেধ আরোপ করা যায়না। এমনকি প্রাকৃতিক আইন বা স্বাভাবিক আইন দ্বারাও একে নিয়ন্ত্রণ করা যাবেনা।

iii) অসীম ক্ষমতাঃ

সার্বভৌম ক্ষমতা হল রাষ্ট্রের অসীম ক্ষমতা। কারন এর কোনো সীমা বা শেষ নেই। রাষ্ট্র যতখুশি নাগরিক বা সংগঠনের ওপর এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।

iv) অবিভাজ্য ক্ষমতাঃ

        সার্বভৌম ক্ষমতা হল অবিভাজ্য ক্ষমতা। কারন এই ক্ষমতাকে ভাগ করা যায়না। একমাত্র রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ এই ক্ষমতা ভোগ করে। রাষ্ট্রের মধ্যে অবস্থিত অন্যান্য কর্তৃপক্ষের হাতে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকেনা।

v) অহস্তান্তরযোগ্য ক্ষমতাঃ

        সার্বভৌম ক্ষমতা হল অহস্তান্তরযোগ্য ক্ষমতা। কারন এই ক্ষমতাকে এক কর্তৃপক্ষের হাত থেকে অন্য কর্তৃপক্ষের হাতে অর্পণ করা যায়না। একমাত্র রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ এই ক্ষমতা গ্রহন ও তার প্রয়োগ করে। 


লেখক

জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ


এই বিষয়ের ওপর অন্যান্য নোটস

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

প্রথম অধ্যায়

১) রাজনৈতিক তত্ত্ব কাকে বলে? এর প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।


২) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার সাবেকি বা সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গীটি সমালোচনাসহ আলোচনা কর। ১০ (২০২১)


৩) রাজনীতি চর্চার সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করো। ৫ (২০১৯), ৫ (২০২২)


৪) রাজনীতি চর্চায় আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আলোচনা করো। এই দৃষ্টিভঙ্গির দুটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো। ১০ (২০২২)


৫) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা কর । ১০ (২০২০)


৬) আচরণবাদের সীমাবদ্ধতা গুলির উপর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর ।৫ (২০২১)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

৭) সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো।


৮) উত্তর-আচরণবাদের উপর একটি নিবন্ধ লেখ। ৫ (২০২০)


৯)রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার উত্তর-আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গীটি সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২১)


১০) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা কর ।

দ্বিতীয় অধ্যায়

১) সার্বভৌমিকতা কাকে বলে? এর প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।


২) সার্বভৌমিকতার একত্ববাদী তত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করো। একত্ববাদী তত্ত্বের মূখ্য প্রবক্তা কারা? ১০ (২০১৯), ১০ (২০২২)


৩) রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী তত্ত্বটি আলোচনা কর | ১০ (২০২০) ১০ (২০২১)

তৃতীয় অধ্যায়

১) অধিকারের ধারণাটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।


২) স্বাধীনতার ধারণাটিকে সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২০)


৩) সাম্যের ধারনাটি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)


৫) সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলোচনা কর। ১০ (২০২০) ১০ (২০২২)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

চতুর্থ অধ্যায়

১) উদারনীতিবাদী তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর ।


২) উদারনীতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।


৩)  নয়া-উদারনীতিবাদী তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর । ৫ (২০২১)


৪) নয়া-উদারনীতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর। ৫ (২০২০)

পঞ্চম অধ্যায়

১) রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে আদর্শবাদী বা ভাববাদী তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর । ১০ (২০২০)


২) উদারনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী রাষ্ট্রের প্রকৃতি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)


৩) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে উদারনৈতিক তত্ত্বের চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। ৫ (২০২২)


৪) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা করো। ৫ (২০১৯)


৫) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কসীয় তত্ত্বটি আলোচনা করো। ৫ (২০২২)


৬) রাষ্ট্রের প্রকৃতি বিষয়ে গান্ধীর তত্ত্বটি বিশ্লেষণ কর। ১০ (২০২০)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

Main Menu


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code