প্রশ্ন-১; নয়া-উদারনীতিবাদী তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর । ৫ (২০২১)
প্রশ্ন-২; নয়া-উদারনীতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর। ৫ (২০২০)
উত্তরঃ
ভূমিকাঃ
রাষ্ট্রের
উৎপত্তি ও প্রকৃতি সংক্রান্ত যতগুলি মতবাদ প্রচলিত আছে তাঁর মধ্যে অন্যতম হল নয়া-উদারনীতিবাদ।
এই মতবাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রবক্তারা হলেন- জন রলস, রবার্ট
নোজিক, ফ্রেডারিক হায়েক, মিল্টন
ফ্রিডম্যান প্রমুখ।
সংজ্ঞাঃ
নয়া-উদারনীতিবাদ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের পরিধিকে সীমিত করতে চায়
এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের অবসান ঘটিয়ে অর্থনীতির পুরোপুরি বেসরকারিকরণ ঘটাতে চায়।
অর্থাৎ রাষ্ট্রতত্ত্বের আলোচনায় উদারনীতিবাদের
পুনরুত্থানই হল নয়া-উদারনীতিবাদ। নয়া-উদারনীতিবাদকে অনেক সময় নয়া
ক্ল্যাসিক্যাল উদারনীতিবাদ হিসাবেও অভিহিত করা হয়। নয়া-উদারনীতিবিদ সরকারী
ক্ষেত্রের ক্রমসম্প্রসারণকে আটকাতে চায় এবং সম্ভব হলে সরকারী ক্ষেত্রের
ক্রমসম্প্রসারণের এই গতিটাকে বিপরীতমুখী করতে চায়।
প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যঃ
নয়া-উদারনীতিবাদের
উপরিউক্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে এর নিম্নলিখিত প্রকৃতি বা
বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা যায়। যেমন-
i) সীমিত রাষ্ট্রের ধারনাঃ
নয়া-উদারনীতিবাদীরা
রাষ্ট্রের কর্মপরিধিকে সীমিত করার কথা বলে। তবে তারা রাষ্ট্রের পুরোপুরি বিলোপ
চাননা। ধ্রুপদি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদীদের মতোই তাঁরা মনে করেন, রাষ্ট্র অশুভ হলেও প্রয়োজনীয়।
ii) বেসরকারিকরণঃ
নয়া-উদারনীতিবাদ ব্যক্তিগত উদ্যোগের পক্ষপাতী এবং রাষ্ট্রীয়
উদ্যোগের বিরোধী। এর সমর্থকদের মতে,
সরকারি হস্তক্ষেপ ব্যক্তিগত উদ্যোগের ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে এবং মানুষের
কাজকর্মের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব বিস্তার করে।
iii) অবাধ বাণিজ্য নীতিঃ
অর্থনৈতিক
ক্ষেত্রে কোনো রকম রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ নয়া উদারনীতিবাদ পছন্দ করেনা। নয়া
উদারনীতিবাদ মনে করে ব্যক্তিকে প্রকৃত উন্নতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে তার
অর্থনৈতিক জীবনকে সর্বপ্রকার নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হতে হবে। তাই নয়া উদারনীতিবাদ
মুক্তবাজার অর্থনীতিকে স্বীকৃতি দেয়।
iv) ন্যায় সঙ্গত সমাজ গঠনঃ
নয়া
উদারনীতিবাদ ন্যায় সংগত সমাজ গঠনের কথা বলে যেখানে স্বাধীনতা,
সুযোগ,
আয়,
সম্পদ
ও ক্ষমতার ন্যায্য বন্টন থাকবে। সাংবিধানিক উপায়ে জনগণের রাজনৈতিক ও পৌর
অধিকারগুলির সমান উপভোগের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। তবেই ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ
বিকাশ ঘটবে।
v) ব্যক্তি স্বাধীনতার সম্প্রসারণঃ
নয়া
উদারনীতিবাদে ব্যক্তি স্বাধীনতার ব্যাপকতর সম্প্রসারণের কথা বলা হয়। নয়া
উদারনীতিবাদের প্রবক্তাদের মতে, ব্যক্তি
স্বাধীনতার অধিকার সংরক্ষণের জন্যই রাষ্ট্রের প্রয়োজন। ব্যক্তি নিজেই তার
স্বাধীনতা ও অধিকারের সামিল।
সমালোচনাঃ
রাষ্ট্রচিন্তার
ইতিহাসে নয়া-উদারনীতিবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব হিসাবে স্বীকৃতি পেলেও এর
সমালোচনাও কোনো অংশে কম নয়। নীচে নয়া-উদারনীতিবাদের সমালোচনাগুলি উল্লেখ করা হল-
i) রক্ষণশীল মতবাদঃ
এই মতবাদকে চরম রক্ষণশীল মতবাদ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ধনতন্ত্রের
রাজনৈতিক তত্ত্ব হিসাবে সপ্তদশ শতকে যে উদারনীতিবাদের আবির্ভাব ঘটে, আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে এসে তাই নয়া-উদারনীতিবাদ
নামে পরিচিত।
ii) চরম ভোগবাদী দর্শনঃ
কোনো কোনো সমালোচক নয়া উদারনীতিবাদকে চরম ভোগবাদী দর্শন বলে
সমালোচনা করেন। মুক্ত বাজার অর্থনীতি ধনতন্ত্রের ভিত্তিতে সুদৃঢ় করবে ঠিকই, কিন্তু তা দিয়ে তৃতীয় বিশ্বের সাধারণ খেটে খাওয়া
মানুষের কতখানি উপকার হবে তা নিয়ে নয়া উদারনীতিবাদীদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
iii) ব্যাক্তি স্বাধীনতার ব্যাপারে নীরবঃ
নয়া-উদারনীতিবাদে
সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয় ব্যক্তির স্বাধীনতার ওপর। কিন্তু একটি
‘ন্যূনতম রাষ্ট্রের পক্ষে সকল শ্রেণির মানুষের স্বার্থ
সুরক্ষিত রাখা কীভাবে সম্ভব, সে
ব্যাপারে নয়া-উদারনীতিবাদীরা সম্পূর্ণ নীরব।
iv) অলঙ্ঘনীয় ব্যাক্তিগত সম্পত্তির অধিকারঃ
নয়া-উদারনীতিবাদে
ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারকে অলঙ্ঘনীয় অধিকার হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু
ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারকে পূর্ণমাত্রায় বজায় রেখে সমাজস্থ সকল মানুষের
অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই সমাজের স্বার্থে এবং সামাজিক উপযোগের কারণে
ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা দরকার।
v) বুর্জোয়া শ্রেণিস্বার্থ রক্ষাঃ
নয়া-উদারনীতিবাদীরা যে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও অবাধ অর্থনীতির কথা বলেন, তা ছিল উদীয়মান বুর্জোয়া শ্রেণিস্বার্থের অনুকূল।
সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, মানুষে মানুষে অসাম্য-বৈষম্য,
মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণ-নির্যাতন- এসব নিয়ে নয়া-উদারনীতিবাদীদের
কোনো চিন্তা ছিলনা।
মূল্যায়নঃ
উপরিউক্ত সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে উদারনীতিবাদের গুরুত্বকে কোনোভাবে অস্বীকার করা যায়না। কারন ব্যাক্তি স্বাধীনতার বিকাশ ও বিস্তারের ক্ষেত্রে উদারনীতিবাদের অবদান অনস্বীকার্য।
লেখক
জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ
এই বিষয়ের ওপর অন্যান্য নোটস
যে প্রশ্নের উত্তর দরকার
সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।
উত্তর পেয়ে যাবে-
প্রথম অধ্যায়
১) রাজনৈতিক তত্ত্ব কাকে বলে? এর প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।
২) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার সাবেকি বা সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গীটি সমালোচনাসহ আলোচনা কর। ১০ (২০২১)
৩) রাজনীতি চর্চার সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করো। ৫ (২০১৯), ৫ (২০২২)
৫) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা কর । ১০ (২০২০)
৬) আচরণবাদের সীমাবদ্ধতা গুলির উপর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর ।৫ (২০২১)
যে প্রশ্নের উত্তর দরকার
সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।
উত্তর পেয়ে যাবে-
৭) সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো।
৮) উত্তর-আচরণবাদের উপর একটি নিবন্ধ লেখ। ৫ (২০২০)
৯)রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার উত্তর-আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গীটি সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২১)
১০) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা কর ।
দ্বিতীয় অধ্যায়
১) সার্বভৌমিকতা কাকে বলে? এর প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।
৩) রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী তত্ত্বটি আলোচনা কর | ১০ (২০২০) ১০ (২০২১)
তৃতীয় অধ্যায়
১) অধিকারের ধারণাটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
২) স্বাধীনতার ধারণাটিকে সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২০)
৩) সাম্যের ধারনাটি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)
৫) সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলোচনা কর। ১০ (২০২০) ১০ (২০২২)
যে প্রশ্নের উত্তর দরকার
সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।
উত্তর পেয়ে যাবে-
চতুর্থ অধ্যায়
১) উদারনীতিবাদী তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর ।
২) উদারনীতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।
৩) নয়া-উদারনীতিবাদী তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর । ৫ (২০২১)
৪) নয়া-উদারনীতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর। ৫ (২০২০)
পঞ্চম অধ্যায়
১) রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে আদর্শবাদী বা ভাববাদী তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর । ১০ (২০২০)
২) উদারনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী রাষ্ট্রের প্রকৃতি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)
৩) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে উদারনৈতিক তত্ত্বের চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। ৫ (২০২২)
৪) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা করো। ৫ (২০১৯)
৫) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কসীয় তত্ত্বটি আলোচনা করো। ৫ (২০২২)
৬) রাষ্ট্রের প্রকৃতি বিষয়ে গান্ধীর তত্ত্বটি বিশ্লেষণ কর। ১০ (২০২০)
0 মন্তব্যসমূহ