লকের উদারনীতিবাদ; John locke's liberalism

Ad Code

লকের উদারনীতিবাদ; John locke's liberalism

 

জন লকের উদারনীতিবাদ


১) উদারনীতিবাদের জনক হিসাবে জন লকের অবদান মূল্যায়ন কর। ১০ (২০২১)
অথবা
লকের উদারনীতিবাদের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো। ৫ (২০২২)
উত্তরঃ

ভূমিকাঃ

পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে জন লক সপ্তদশ শতাব্দী থেকে অষ্টদশ শতাব্দীতে তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার কাঠামো গড়ে তোলেন। তাঁর লেখা দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল অন লিবার্টি  এবং টু ট্রিটিজেস অফ গভর্নমেন্ট। তাঁর সমগ্র রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে উদানীতিবাদ  সম্পর্কিত ধ্যান-ধারণা ছিল অন্যতম।

লকের মতে উদারনীতিবাদঃ

        লকের উদারনীতিবাদের মূল কথা হল যুক্তিবাদ, সহনশীলতা ও সাংবিধানিক সরকার। সাংবিধানিক সরকার  তত্ত্বটি প্রচার করে লক  উদারনীতিবাদের গোড়াপত্তন  করে গেছেন।  একই সঙ্গে সরকার জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকবে। এই দায়বদ্ধতাই হল উদারনীতিবাদের প্রধান স্তম্ভ।


প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যঃ

        লকের উদারনীতিবাদের উপরিউক্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে এর নিম্নলিখিত প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা যায়। যেমন-

১) ব্যাক্তি স্বাধীনতার ওপর গুরুত্ব আরোপঃ

        উদারনীতিবাদের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর গুরুত্ব আরোপ। লকের মতে স্বাধীনতা হল মানুষের জন্মগত অধিকার। এই অধিকার সে প্রাক্-রাষ্ট্রীয় সমাজেও যেমন ভোগ করত তেমনি আবার রাষ্ট্র সৃষ্টির পরও ভোগ করবে। লকের কাছে ব্যক্তিই ছিল প্রধান এবং রাষ্ট্র কতকগুলি উদ্দেশ্যসাধনের উপায় ছাড়া আর কিছুই ছিল না। রাষ্ট্রসমাজ গঠনের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকার রক্ষা করা।

২) রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণঃ

        উদারনীতিবাদের অপর একটি বক্তব্য হল রাষ্ট্রশক্তি সার্বভৌম হলেও তা চরম ও স্বেচ্ছাচারী নয়। লকের সামাজিক চুক্তি মতবাদে একথাই বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রসমাজ তার সার্বভৌমত্বের জোরে অসীম ও যথেচ্ছ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠতে পারে না, কারণ ব্যক্তিই হল রাষ্ট্রশক্তির উৎস।

৩) ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিঃ

        লকের উদারনীতিবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির উপস্থিতি। এই নীতি অনুযায়ী সরকারের বিভিন্ন বিভাগ স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে তাঁদের কার্যাবলি সম্পাদন করবে। অর্থাৎ সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজকর্মের ওপর কোনোরকম হস্ত্যক্ষেপ করবেনা।



৪) সম্পত্তি তত্ত্বঃ

        লকের উদারনীতিবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সম্পত্তি তত্ত্ব।  লক্ একদিকে যেমন ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্য্, মর্যাদা ও অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখাকে রাষ্ট্রের পবিত্র কর্তব্য বলে ঘোষণা করেছেন, অন্যদিকে তেমনি রাষ্ট্রকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অতন্দ্র প্রহরী বলে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে, সম্পত্তির অধিকার হল অ-হস্তান্তরযোগ্য অধিকার। ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকারের মধ্যে লক সম্পত্তির অধিকারকেই  সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। লকের মতে, ব্যাক্তিগত সম্পত্তি রক্ষার তাগিদে মানুষ প্রকৃতির রাজ্য পরিত্যাগ করে  রাষ্ট্রসমাজ গড়ে তুলেছে।

৫) বিপ্লবের অধিকারঃ

        লক মনে করেন, জনস্বার্থ-বিরোধী সরকারের বিরোধিতা করা জনগণের স্বাভাবিক অধিকার। জীবন, স্বাধীনতা এবং সম্পত্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে জনগণ চুক্তি করে সরকারের প্রতিষ্ঠা করেছে। জনগণের এই উদ্দেশ্যসাধনে সরকার ব্যর্থ হলে, অযোগ্য সরকারকে অপসারণ করে তারা নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অর্থাৎ সীমাবদ্ধ শাসনব্যবস্থার ধারণার মধ্যেই লকের বিপ্লবের অধিকার তত্ত্ব নিহিত রয়েছে।

সমালোচনাঃ

         জন লকের উদারনীতিবাদ বিভিন্ন সময়ে প্রশংসিত হলেও তার কিছু  দুর্বলতাও রয়েছে। নীচে জন লকের উদারনৈতিক ধ্যান-ধরনার সমালোচনাগুলি উল্লেখ করা হল-


১) স্ববিরোধীতাঃ

        লকের উদারনীতিবাদের মধ্যে স্ববিরোধীতার অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। তিনি একদিকে ব্যাক্তি স্বাধীনতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন, অন্যদিকে এই ব্যাক্তি স্বাধীনতার ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথাও বলেছেন। অর্থাৎ লকের উদারনীতিবাদে ব্যাক্তি স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্ঠা করা হয়েছে।

২) রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণঃ

        লকের উদারনীতিবাদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রন আরোপের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হলে কিংবা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়লে, কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র শক্তির অভাবে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অরাজকতা দেখা দেবে। আপতকালীন অবস্থায় পরিস্থিতির মোকাবিলা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

৩) ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ভূল ব্যাখ্যাঃ

        লকের উদারনীতিবাদে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। কারন, ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতির আধুনিক ভাষ্যে আইনবিভাগ, শাসনবিভাগ ও বিচারবিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বিভাজনের কথা বলা হলেও লক্‌ কেবলমাত্র আইনবিভাগ ও শাসনবিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বিভাজনের কথা বলেছেন। এছাড়া  লকের ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বে আইনবিভাগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

৪) বুর্জোয়া শ্রেণী স্বার্থের সহায়কঃ

        সমালোচকরা লকের উদারনীতিবাদকে বুর্জোয়া শ্রেণী স্বার্থের সহায়ক মতবাদ বলে মনে করেছেন। অনেকে মনে করেন যে, লক্ যেভাবে সম্পত্তির অধিকার তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করেছেন, তাতে সমকালীন উদীয়মান বুর্জোয়া সমাজব্যবস্থাকে সমর্থন করার প্রয়াস বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়।

৫) বিপ্লবের ভ্রান্ত ধারনাঃ

        লকের উদারনীতিবাদে সমাজ বিপ্লবের ভ্রান্ত ধারণা প্রদান করা হয়েছে। কারণ, প্রকৃত বিপ্লবের উদ্দেশ্য হল সমাজের আমূল পরিবর্তন সাধন করা। কিন্তু লকের বিপ্লব তত্ত্বে প্রচলিত কাঠামো ও ব্যবস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ সংস্কারসাধণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া লকের বিপ্লবের অধিকার হল পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে কায়েম করার এক কৌশল। সম্পত্তির মালিকদের যদি এই প্রত্যয় জন্মায় যে, সরকার তাদের সম্পত্তি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাহলে তারা বিপ্লবের মাধ্যমে আইনসভা বাতিল করে দিতে পারে।

মূল্যায়নঃ

        উপরিউক্ত সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে লকের উদারনীতিবাদের গুরুত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায়না। কারন লক তাঁর উদারনীতিবাদে যেভাবে ব্যাক্তি স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্ঠা করা করেছেন তা রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে অনন্য। 

লেখক

জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ


এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস


(বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সহ)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


Main Menu


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code