হেগেলের রাষ্ট্রতত্ত্ব

Ad Code

হেগেলের রাষ্ট্রতত্ত্ব

 

হেগেলের রাষ্ট্রতত্ত্ব

প্রশ্ন-১; সমালোচনাসহ হেগেলের রাষ্ট্রতত্ত্বটি পর্যালোচনা কর। ১০ (২০২০)
উত্তরঃ

ভূমিকাঃ

        পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে হেগেল অষ্টদশ থেকে উনবিংশ শতাব্দীতে তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার কাঠামো গড়ে তোলেন। তাঁর লেখা দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল- Science of Logic, Elements of the Philosophy of Rightতাঁর সমগ্র রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে  রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধ্যান-ধারণা ছিল অন্যতম।

হেগেলের রাষ্ট্রের ধারনাঃ

জার্মান দার্শনিক হেগেল হলেন রাষ্ট্রের ভাববাদী তত্ত্বের শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা। হেগেল রাষ্ট্রের ওপর স্বতন্ত্র ব্যক্তিসত্তা আরোপ করেছেন। তাঁর মতে রাষ্ট্র একটি সচেতন নৈতিক আদর্শসম্পন্ন ব্যক্তি যার আত্মজ্ঞান ও আত্মোপলব্ধির ক্ষমতা আছে আবার রাষ্ট্রের ব্যক্তিত্ব সামগ্রিকভাবে সকল ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত। হেগেলের মতে রাষ্ট্র হল সমষ্টিগত ইচ্ছার প্রতীক। তাঁর রাষ্ট্র সম্পর্কিত চিন্তাধারা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি দেখা যায়-


i) রাষ্ট্র সর্বচ্চ ও অভ্রান্ত প্রতিষ্ঠানঃ

        হেগেল রাষ্ট্রকে একটি স্বাভাবিক, প্রয়োজনীয় এবং চূড়ান্ত কর্তৃত্ব সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বলে মনে করেছেন। হেগেলের মতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা অসীম, চরম এবং সর্বব্যাপী। সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে এর স্থান। রাষ্ট্র হল জগতের অভিভাবক।

ii) রাষ্ট্রের ঊপর দেবত্ব আরোপঃ

হেগেল রাষ্ট্রের উপর দেবত্ব আরোপ করেছেন। তাঁর মতে রাষ্ট্র হল আধ্যাত্মিক যুক্তির প্রতীক ও প্রকাশ। এ হল এক স্বর্গীয় সংগঠন। পৃথিবীতে ঈশ্বরের উপলব্ধি রাষ্ট্রের মাধ্যমেই সম্ভব। কান্ট ও হেগেল এই দুই জার্মান দার্শনিকের মতানুসারে রাষ্ট্র হল পৃথিবীতে ঈশ্বরের পদক্ষেপ।

iii) রাষ্ট্র অধিকার ও স্বাধীনতার উৎসঃ

         হেগেলের মতে, রাষ্ট্র ব্যক্তির অধিকার, স্বাধীনতা সহ সবকিছু ভালোর উৎস। কেবল রাষ্ট্রের মধ্যেই ব্যাক্তির স্বাধীনতা ভোগ সম্ভব। রাষ্ট্রের প্রতি চরম আনুগত্য প্রদর্শনের মাধ্যমে নৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করা যায়। হেগেলের মতানুসারে ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে যে স্বাধীনতা ভোগ করে সেটাই হল যথার্থ বা প্রকৃত স্বাধীনতা।

iv) রাষ্ট্র জীবদেহের ন্যায়ঃ

হেগেল রাষ্ট্র ও জীবদেহকে এক করে দেখেছেন। দেহের কোনো অংশকে বাদ দিয়ে যেমন দেহ চলতে পারবে না, তেমনি রাষ্ট্রও তাঁর অন্যান্য অংশগুলি ছাড়া অচল। রাষ্ট্র জীবদেহের মতই একটি সামগ্রিক সত্ত্বা। রাষ্ট্রের বিশেষ কোনো অংশ নিজে নিজে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়না।

v) রাষ্ট্র সমষ্টিগত ইচ্ছার প্রতীকঃ

        হেগেলের মতে রাষ্ট্র হল সমষ্টিগত ইচ্ছার প্রতীক। সমষ্টিগত ইচ্ছা বা সাধারণ ইচ্ছা হল প্রত্যেকের প্রকৃত ইচ্ছার সর্বোৎকৃষ্ট সমন্বয়। সমষ্টিগত ইচ্ছার মধ্যে সার্বজনীন কল্যাণ নিহিত আছে। এই ইচ্ছা হল সার্বজনীন কল্যাণের প্রতীক।


সমালোচনাঃ

        রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে হেগেলের রাষ্ট্র তত্ত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব হিসাবে স্বীকৃতি পেলেও এর সমালোচনাও কোনো অংশে কম নেই। নীচে হেগেলের রাষ্ট্র তত্ত্বের সমালোচনাগুলি উল্লেখ করা হল-

i) রাষ্ট্র সর্বচ্চ প্রতিষ্ঠান নয়ঃ

        সমালোচকদের মতে হেগেল রাষ্ট্রকে স্বাভাবিক, প্রয়োজনীয় এবং চূড়ান্ত কর্তৃত্ব সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বলে মনে করে, ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার ইন্ধন জুগিয়েছেন। এছাড়া মার্কসবাদীদের মতে, রাষ্ট্র শাশ্বতও নয়, আবার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানও নয়। তাঁদের মতে রাষ্ট্র একটি শোষণের যন্ত্র। সমাজের অর্থনৈতিক বিকাশের একটি বিশেষ স্তরে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে এবং শোষণের অবসানে রাষ্ট্রের বিলুপ্তি ঘটাবে।

ii) অবাস্তব ধারণাঃ

সমালোচকদের মতে হেগেলের রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণা হল একটি অবাস্তব ধারণা। এখানে রাষ্ট্রের বাস্তব উপাদানকে অস্বীকার করে রাষ্ট্রকে বাস্তবতাবর্জিত আদর্শের দৃষ্টিতে দেখা হয়। হেগেলের রাষ্ট্র তত্ত্বে যে রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছে তা বিমূর্ত ও অধিবিদ্যক। অর্থাৎ হেগেল, যে রাষ্ট্রের কল্পনা করেছেন তা স্বর্গরাজ্যে সম্ভব হতে পারে, মাটির পৃথিবীতে তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

iii) ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরোধীঃ

হেগেলের রাষ্ট্র তত্ত্ব ব্যক্তি-স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের পরিপন্থী। এই মতবাদে রাষ্ট্রের চরম ক্ষমতার কাছে ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে বলি দেওয়া হয়েছে। হেগেল তাঁর রাষ্ট্র তত্ত্বে ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের  ক্রীড়নকে পরিণত করা হয়েছে। তার ফলে রাষ্ট্রীয় স্বৈরাচারের পথ প্রশস্ত হয়েছে।

iv) রাষ্ট্র ও জীবদেহ এক নয়ঃ

        হেগেল তাঁর রাষ্ট্র তত্ত্বে রাষ্ট্র ও জীবদেহকে এক করে দেখেছেন। কিন্তু বাস্তবে তা কখনো এক হতে পারেনা। কারন জীবদেহের মধ্যে যে জৈবিক ক্রিয়া সম্পাদিত হয়ে রাষ্ট্রের মধ্যে তা কখনো কল্পনাও করা যায়না।

v) অগণতান্ত্রিক ধারনাঃ

সমালোচকদের মতে হেগেলের রাষ্ট্র তত্ত্ব একটি অগণতান্ত্রিক তত্ত্ব। এখানে  রাষ্ট্রকে সমষ্টিগত ইচ্ছার সমষ্টি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু এই সমষ্টিগত ইচ্ছার মধ্যে সকলের ইচ্ছা নাও থাকতে পারে। অর্থাৎ এই মতবাদে সমষ্টিগত ইচ্ছা বা  প্রকৃত ইচ্ছার নামে সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছাকেই ব্যক্তির উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মূল্যায়নঃ

        উপরিউক্ত সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে ভাববাদ বা আদর্শবাদের গুরুত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায়না। কারন রাষ্ট্রের প্রতি ব্যাক্তির আনুগত্যের বিষয়টিকে কখনো উপেক্ষা করা যায়না। 

লেখক

জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ


এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস


(বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সহ)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


Main Menu


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code