সাম্য ও স্বাধীনতা; পারস্পারিক সম্পর্ক

Ad Code

সাম্য ও স্বাধীনতা; পারস্পারিক সম্পর্ক

 


প্রশ্ন-১;  সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলোচনা কর। ১০ (২০২০) ১০ (২০২২)
উত্তরঃ 


সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্কঃ

সাম্য ও স্বাধীনতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত । বস্তুত সাম্য ছাড়া যেমন স্বাধীনতা হয় না, তেমনি স্বাধীনতা ছাড়া সাম্যও অসম্পূর্ণ। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সাম্যের দাবির বহু আগে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য দাবি ওঠেছিল। তাই  বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্কের বিষয়টিকে আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন – 

i) স্বাধীনতার ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপঃ

প্রাচীন ও মধ্যযুগে সাম্যের তুলনায় স্বাধীনতাকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হত। প্রাচীন রোম , গ্রিস , মিশর - ইত্যাদি সভ্যতায় ক্রীতদাস প্রথা চালু থাকায় সাম্যের তুলনায় স্বাধীনতার বিষয়টি অধিক গুরুত্বলাভ করেছিল। একইভাবে মধ্যযুগ পর্যন্ত সাম্যের গুরুত্ব উপেক্ষিত থেকে যায়। এমনকি , জন লক যে তিনটি স্বাভাবিক অধিকারের কথা বলেছিলেন - তার মধ্যেও সাম্যের অধিকার উল্লিখিত ছিলনা।

ii) সাম্য ও স্বাধীনতার ওপর সমান গুরুত্ব আরোপঃ

১৭৭৬ সালে আমেরিকার অধিকারপত্র ঘোষণা এবং ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লব প্রসূত নাগরিকদের অধিকার ঘোষণায় সাম্য ও স্বাধীনতার সমান গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে ফরাসি বিপ্লব প্রসূত তিনটি মহান আদর্শ ছিল - সাম্য , মৈত্রী ও স্বাধীনতা। এই চিন্তাধারার হাত ধরেই সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্কের বিষয়টি আত্মপ্রকাশ করতে থাকে। সাঁ সিমো , রবার্ট ওয়েন , মোরলি - প্রমুখের রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তায় সাম্য ও স্বাধীনতার সমান সম্পর্কের বিষয়টির উল্লেখ ছিল। 

iii) সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পরের পরিপন্থীঃ 

সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পরের পরিপন্থী - এইরূপ দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম প্রধান প্রবক্তা ছিলেন লর্ড অ্যাক্টন। পরবর্তীকালে স্পেনসার , লেকি - প্রমুখেরাও লর্ড অ্যাকটনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সাম্য ও স্বাধীনতাকে পরস্পরের পরিপন্থী বলে প্রচার করেন। সাম্য নীতির প্রতিষ্ঠা - ধনবান , অভিজাত , রাজপরিবার , ধর্মযাজক - এই ধরণের ব্যক্তিবর্গের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে - তাই তারাও সাম্যের বিরোধিতা করেন। লেকির মতে, সাম্য নীতির প্রতিষ্ঠা সমাজের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন শ্রেণীগুলির মধ্যে পারস্পরিক ভারসাম্য ও নির্ভরশীলতার চরম ক্ষতি করে। 

iv) সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পরের পরিপূরকঃ

ঊনবিংশ শতকে সাম্য ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্পর্কের ধারণার বিবর্তন ঘটে। যেসকল রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের হাত ধরে এই পরিবর্তন ঘটে তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিলেন জন স্টুয়ার্ট মিল। তিনি সাম্য ও স্বাধীনতাকে পরস্পরের পরিপূরক বলে দাবী করেন। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিংশ শতকে ল্যাস্কি , বার্কার - প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ সাম্য ও স্বাধীনতাকে পরস্পরের পরিপূরক হিসাবে প্রচার করেন।

v) ল্যাস্কির অভিমত

ল্যাস্কি অর্থনৈতিক সাম্যকে স্বাধীনতার অন্যতম শর্ত ও উপাদান হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে , অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত কখনোই প্রকৃত স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা। অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত রাজনৈতিক স্বাধীনতা ভিত্তিহীন।  তাঁর মতে প্রকৃত স্বাধীনতা তখনই কার্যকর হবে যখন সামাজিক সংগঠন , রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান , সরকার পরিচালনা , নীতি নির্ধারণ - ইত্যাদি বিষয়গুলিতে জনগণের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সাম্য নীতি প্রতিষ্ঠিত হবে।

মূল্যায়নঃ

পরিশেষে বলা যায় যে , সাম্য ও স্বাধীনতা কখনোই পরস্পরের বিরোধী নয়। তারা পরস্পরের সহায়ক। প্রতিটি উদারনৈতিক - গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাম্য ও স্বাধীনতার সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়। মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সমাজে প্রয়োজন স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতার পূর্বশর্ত হল সাম্য। 


লেখক

জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ


এই বিষয়ের ওপর অন্যান্য নোটস

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

প্রথম অধ্যায়

১) রাজনৈতিক তত্ত্ব কাকে বলে? এর প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।


২) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার সাবেকি বা সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গীটি সমালোচনাসহ আলোচনা কর। ১০ (২০২১)


৩) রাজনীতি চর্চার সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করো। ৫ (২০১৯), ৫ (২০২২)


৪) রাজনীতি চর্চায় আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আলোচনা করো। এই দৃষ্টিভঙ্গির দুটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো। ১০ (২০২২)


৫) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা কর । ১০ (২০২০)


৬) আচরণবাদের সীমাবদ্ধতা গুলির উপর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর ।৫ (২০২১)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

৭) সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো।


৮) উত্তর-আচরণবাদের উপর একটি নিবন্ধ লেখ। ৫ (২০২০)


৯)রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার উত্তর-আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গীটি সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২১)


১০) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা কর ।

দ্বিতীয় অধ্যায়

১) সার্বভৌমিকতা কাকে বলে? এর প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।


২) সার্বভৌমিকতার একত্ববাদী তত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করো। একত্ববাদী তত্ত্বের মূখ্য প্রবক্তা কারা? ১০ (২০১৯), ১০ (২০২২)


৩) রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী তত্ত্বটি আলোচনা কর | ১০ (২০২০) ১০ (২০২১)

তৃতীয় অধ্যায়

১) অধিকারের ধারণাটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।


২) স্বাধীনতার ধারণাটিকে সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২০)


৩) সাম্যের ধারনাটি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)


৫) সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলোচনা কর। ১০ (২০২০) ১০ (২০২২)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

চতুর্থ অধ্যায়

১) উদারনীতিবাদী তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর ।


২) উদারনীতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।


৩)  নয়া-উদারনীতিবাদী তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর । ৫ (২০২১)


৪) নয়া-উদারনীতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর। ৫ (২০২০)

পঞ্চম অধ্যায়

১) রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে আদর্শবাদী বা ভাববাদী তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর । ১০ (২০২০)


২) উদারনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী রাষ্ট্রের প্রকৃতি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)


৩) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে উদারনৈতিক তত্ত্বের চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। ৫ (২০২২)


৪) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা করো। ৫ (২০১৯)


৫) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কসীয় তত্ত্বটি আলোচনা করো। ৫ (২০২২)


৬) রাষ্ট্রের প্রকৃতি বিষয়ে গান্ধীর তত্ত্বটি বিশ্লেষণ কর। ১০ (২০২০)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

Main Menu


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code