প্রশ্ন-১; স্বাধীনতার ধারণাটিকে সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২০)
উত্তরঃ
ভূমিকাঃ
রাষ্ট্রদর্শনের ইতিহাসে সাম্য,
মৈত্রী
ও স্বাধীনতা—এই তিনটি রাজনৈতিক আদর্শ যুগ যুগ ধরে সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে
মানুষকে প্রেরণা জুগিয়েছে। গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার ওপর
সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। মানুষের স্বাধীনতা উপভোগের জন্য সাম্যের
প্রয়োজন।
স্বাধীনতার সংজ্ঞাঃ
স্বাধীনতা বা Liberty'
শব্দটি
লাতিন শব্দ ' Liber' থেকে
গৃহীত হয়েছে। 'Liber ‘শব্দ
এর অর্থ হল স্বাধীনতা। সাধারণভাবে স্বাধীনতা বলতে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করার অবাধ
অধিকারকে বোঝায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কিন্তু স্বাধীনতা শব্দটি এই অর্থে ব্যবহৃত
হয়না। কারন অবাধ, অনিয়ন্ত্রিত
ও সীমাহীন স্বাধীনতা হল স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর মাত্র।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্বাধীনতা
সম্পর্কিত সংজ্ঞা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। জন স্টুয়ার্ট
মিলের মতে, স্বাধীনতা হল ব্যক্তির চিন্তাধারার অব্যাহত প্রকাশ। তাঁর মতে, ব্যক্তির আত্মকেন্দ্রিক কার্যের ওপর রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের অপসারণ হল
স্বাধীনতা। ল্যাস্কির মতে, “স্বাধীনতা হল সেই পরিবেশের সযত্ন
সংরক্ষণ, যে পরিবেশে মানুষ তার ব্যক্তিসত্তাকে পরিপূর্ণভাবে
বিকশিত করতে পারে" মার্কসবাদীদের মতে, মানুষের
যোগ্যতা ও সামর্থ্যের সর্বাঙ্গীন বিকাশকে স্বাধীনতা বলে অভিহিত করা যায়।
স্বাধীনতার প্রকৃতিঃ
স্বাধীনতার
ধারনার উপরিউক্ত সংজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে তিন দিক থেকে স্বাধীনতার প্রকৃতি আলোচনা
করা যেতে পারে। যেমন-
i) নেতিবাচক দিকঃ
সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত
স্বাধীনতাই হল নেতিবাচক স্বাধীনতা। নেতিবাচক স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ প্রবক্তারা
হলেন- জেরেমি বেন্থাম, অ্যাডাম
স্মিথ, জন স্টুয়ার্ট মিল,
হার্বাট
স্পেনসার, হবস,
লক
প্রমুখ। এদের মতে, রাষ্ট্রের
নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পেলে ব্যক্তির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা যায়। তাই ব্যক্তির
ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য কোনো প্রকার রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রন বা হস্তক্ষেপের প্রয়োজন
নেই।
ii) ইতিবাচক দিকঃ
সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ও
নিয়ন্ত্রণযুক্ত স্বাধীনতাই হল ইতিবাচক স্বাধীনতা। ইতিবাচক স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ
প্রবক্তারা হলেন- হেগেল, গ্রিন,
হবহাউস,
ল্যাস্কি,
বার্কার
প্রমুখ। এদের মতে, ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বার্থে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক।
কারন ব্যক্তি যে স্বাধীনতা ভোগ করে তা একমাত্র রাষ্ট্রের সহায়তায় সম্ভব।
স্বাধীনতা ভোগ করার জন্য যে উপযুক্ত পরিবেশ দরকার তা একমাত্র রাষ্ট্রই গড়ে তুলতে
পারে।
iii) মার্কসীয় দিকঃ
মার্কসবাদীরা
সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাধীনতার ধারণার ব্যাখা দিয়েছে। মার্কসীয়
দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ধন বৈষম্য মূলক ও শ্রেণি বিভক্ত সমাজে প্রকৃত স্বাধীনতার
অস্তিত্ব কখনোই সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ না ঘটলে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা
করা যাবে না। একমাত্র পুঁজিবাদী শোষণ ব্যবস্থার অবসান ঘটলেই প্রকৃত স্বাধীনতা
প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
স্বাধীনতার প্রকারভেদ
বিভিন্ন
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্বাধীনতার ধারণাটিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন।
ফলে স্বাধীনতার বিভিন্ন প্রকারভেদের কথা উল্লেখ করা যায়। যেমন-
i) পৌর স্বাধীনতাঃ
পৌর স্বাধীনতা
বলতে রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত সেইসব অধিকার ভোগকে বোঝায় যেগুলি মানুষের
ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশের জন্য অপরিহার্য। পৌর স্বাধীনতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জীবনের অধিকার, চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা,
ব্যাক্তিগত সম্পত্তির স্বাধীনতা, ধর্মাচরনের স্বাধীনতা, পরিবার গঠনের স্বাধীনতা
প্রভূতি।
ii) রাজনৈতিক স্বাধীনতাঃ
রাজনৈতিক
স্বাধীনতা বলতে সরকার গঠন করার, সরকারকে সমালোচনা করার, এককথায় রাজনৈতিক
ক্রিয়াকর্মে অংশগ্রহণের অধিকারকে বোঝায়। নির্বাচন করার ও নির্বাচিত হওয়ার
অধিকার, সরকারকে সমালোচনা করার অধিকার, সরকারি চাকরি লাভের অধিকার ইত্যাদি হল রাজনৈতিক স্বাধীনতা।
iii) অর্থনৈতিক স্বাধীনতাঃ
অর্থনৈতিক
স্বাধীনতা বলতে প্রধানত অভাব ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি লাভের অধিকারকে বোঝায়।
যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাওয়ার অধিকার, উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকার, বৃদ্ধ
অথবা অক্ষম অবস্থায় সরকার কর্তৃক প্রতিপালিত হওয়ার অধিকার ইত্যাদি অর্থনৈতিক
স্বাধীনতার অন্তর্গত। এছাড়াও অবকাশ যাপনের অধিকার, বিশ্রামের
অধিকার, সবেতন ছুটি পাওয়ার অধিকার ইত্যাদিও অর্থনৈতিক
অধিকার হিসাবে স্বীকৃত।
মূল্যায়নঃ
পরিশেষে
বলা যায় স্বাধীনতার ধারনা এমন এক ধারনা যাকে কখনই কোন সীমিত গণ্ডির মধ্যে আটকে
রাখা যায়না। স্বাধীনতার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ যেমন কাম্য নয় তেমনি স্বাধীনতা পুরপুরি
নিয়ন্ত্রনবিহীনও হতে পারেনা।
লেখক
জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ
এই বিষয়ের ওপর অন্যান্য নোটস
যে প্রশ্নের উত্তর দরকার
সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।
উত্তর পেয়ে যাবে-
প্রথম অধ্যায়
১) রাজনৈতিক তত্ত্ব কাকে বলে? এর প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।
২) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার সাবেকি বা সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গীটি সমালোচনাসহ আলোচনা কর। ১০ (২০২১)
৩) রাজনীতি চর্চার সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করো। ৫ (২০১৯), ৫ (২০২২)
৫) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা কর । ১০ (২০২০)
৬) আচরণবাদের সীমাবদ্ধতা গুলির উপর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর ।৫ (২০২১)
যে প্রশ্নের উত্তর দরকার
সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।
উত্তর পেয়ে যাবে-
৭) সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো।
৮) উত্তর-আচরণবাদের উপর একটি নিবন্ধ লেখ। ৫ (২০২০)
৯)রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার উত্তর-আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গীটি সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২১)
১০) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা কর ।
দ্বিতীয় অধ্যায়
১) সার্বভৌমিকতা কাকে বলে? এর প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।
৩) রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী তত্ত্বটি আলোচনা কর | ১০ (২০২০) ১০ (২০২১)
তৃতীয় অধ্যায়
১) অধিকারের ধারণাটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
২) স্বাধীনতার ধারণাটিকে সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২০)
৩) সাম্যের ধারনাটি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)
৫) সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলোচনা কর। ১০ (২০২০) ১০ (২০২২)
যে প্রশ্নের উত্তর দরকার
সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।
উত্তর পেয়ে যাবে-
চতুর্থ অধ্যায়
১) উদারনীতিবাদী তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর ।
২) উদারনীতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।
৩) নয়া-উদারনীতিবাদী তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর । ৫ (২০২১)
৪) নয়া-উদারনীতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর। ৫ (২০২০)
পঞ্চম অধ্যায়
১) রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে আদর্শবাদী বা ভাববাদী তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর । ১০ (২০২০)
২) উদারনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী রাষ্ট্রের প্রকৃতি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)
৩) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে উদারনৈতিক তত্ত্বের চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। ৫ (২০২২)
৪) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা করো। ৫ (২০১৯)
৫) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কসীয় তত্ত্বটি আলোচনা করো। ৫ (২০২২)
৬) রাষ্ট্রের প্রকৃতি বিষয়ে গান্ধীর তত্ত্বটি বিশ্লেষণ কর। ১০ (২০২০)
0 মন্তব্যসমূহ