রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা
ভূমিকাঃ
ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উনবিংশ
ও বিংশ শতাব্দীতে তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার কাঠামো গড়ে তোলেন। রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত
সমাজ, স্বদেশী সমাজ, ভারতবর্ষীয় সমাজ, এবং কালান্তর পর্যায়ের বিভিন্ন প্রবন্ধে
তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর সমগ্র রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে জাতীয়তাবাদ
সম্পর্কিত ধ্যান ধারণা হল অন্যতম।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে জাতীয়তাবাদঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাষ্ট্রচিন্তায় জাতীয়তাবাদের বিষয়টি বিশেষভাবে
তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি ইউরোপের নিয়মতান্ত্রিক প্রকৃতির জাতীয়তাবাদী ধারণাকে স্বীকার
বা সমর্থন করেননি। তাঁর রচিত ন্যাশনালিজম, শিক্ষার মিলন, সভ্যতার সংকট, নেশন কী
প্রকৃতি গ্রন্থ তথা প্রবন্ধে জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার পরিচয় পাওয়া যায়।
ন্যাশনালিজম শীর্ষক গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদকে মহামারী
বলেছেন যার ক্রম বিস্তারী আক্রমণে মানব সভ্যতা বিপন্ন। শিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষার
মিলন এবং সভ্যতার সংকট শীর্ষক প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদকে উগ্রজাতীয়তাবাদ
হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এ ধরনের জাতীয়তাবাদ অবধারিতভাবে সম্রাজ্যবাদের পরিণতি লাভ
করে। নেশন কী শীর্ষক প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদকে একটি সজীব সত্তা এবং একটি
মানস পদার্থ বলে অবহিত করেছেন।
রবীন্দ্রনাথের কাছে জাতীর থেকে মানুষ ছিল বড়। তিনি জাতিপুজোর বিরোধিতা করেছেন। তাঁর মতানুসারে জাতীয়তাবাদের মধ্যে অন্ধ দেশভক্তি ও সম্রাজ্যবাদের বীজ বর্তমান। জাতীয়তাবাদ একটি নেশা। জাতীয়তাবাদের প্রভাবে মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি হয়। রবীন্দ্রনাথের মতে জাতীয়তাবাদ হল মানুষের তৈরি এক দানব। কালক্রমে জাতীয়তাবাদ সম্রাজ্যবাদী শক্তির রণহুঙ্কারে পরিনত হয়।
সমালোচনাঃ
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের জাতীয়তাবাদী চিন্তা বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে। নীচে রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের জাতীয়তাবাদী চিন্তা ধারার সমালোচনাগুলি উল্লেখ করা হল-
ক) অস্পষ্ট ধারনাঃ
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত ধ্যান ধারণা যথেষ্ঠ অস্পষ্ট। তিনি ইউরোপীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার
সাথে ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার তুলনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত
ধ্যান ধারণা প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর এটা করতে গিয়ে তিনি তাঁর জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত
চিন্তা ভাবনাকে জটিল ও অস্পষ্ট করে তুলেছেন।
খ) অসম্পুর্ণ ধারনাঃ
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত ধ্যান ধারণা একটি অসম্পুর্ণ ধারণা। কারন রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর তাঁর জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত ধ্যান ধারনায় জাতীয়তাবাদ উৎপত্তি, বিকাশ,
কার্যাবলী ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তেমন কেনো আলোচনা করেননি। তিনি কেবল ইউরোপীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার
পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয়তাবাদী ধ্যান ধারনার সমালোচনা করেছেন মাত্র।
গ) স্ববিরোধীতাঃ
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত ধ্যান ধারনায় স্ববিরোধীতার অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়।
তিনি জাতীয়তাবাদের বিরোধীতা করলেও জাতীয়তাবাদের মহান উদ্দেশ্যকে সমর্থন করেছে।
এজন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আন্তর্জাতিকতাবাদের ধারনার অবতারনা করেছেন।
ঘ) ধর্ম ও নৈতিকতার প্রভাবঃ
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা ধর্ম ও নৈতিকতার দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছে।
তিনি জাতীয়তাবাদকে একটি মহান উদ্দেশ্য বা শক্তি
বলে মনে করেছেন যার মাধ্যমে বিশ্বমৈত্রী ও বিশ্ব মানবতার কল্যান সাধন সম্ভব।
অর্থাৎ রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত ধ্যান ধারনায় বাস্তবতার পরিবর্তে
ধর্ম ও নীতি নৈতিকতার প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়েছে।
ঙ) জাতীয়তাবাদী আন্দোলনঃ
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত চিন্তাধারায় জাতীয়তাবাদের তাত্ত্বিক ধারণা উপেক্ষিত
হয়েছে। তিনি জাতীয়তাবাদের তাত্ত্বিক আলোচনার পরিবর্তে ব্রিটিশ শসনাধীন ভারতবর্ষে
ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সামনে রেখে তার জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত
চিন্তাধারার কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন।
মূল্যায়নঃ
উপরিউক্ত সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত চিন্তাভাবনার গুরুত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায়না। সমসাময়িক ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক নেতারা জাতীয়তাবাদকে যেভাবে রাজনৈতিক চক্রান্তের হাতয়ারে পরিনত করেছিলেন সেক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা ছিল এই ঘৃণ্য প্রবণতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ।
স্বল্প মূল্যে এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস
পেতে চাইলে
সরাসরি যোগাযোগ করো
8967181871
এই নম্বরে
বিশেষ দ্রষ্টব্য
টাইপ করা নোটস(pdf) দেওয়া হয়
এবং
ডিজিটাল মাধ্যমে অনলাইন/ অফলাইন
ক্লাসেরও সুব্যবস্থা আছে
0 মন্তব্যসমূহ