রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাজ চিন্তা
ভূমিকাঃ
ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উনবিংশ
ও বিংশ শতাব্দীতে তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার কাঠামো গড়ে তোলেন। রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত
সমাজ, স্বদেশী সমাজ, ভারতবর্ষীয় সমাজ, এবং কালান্তর পর্যায়ের বিভিন্ন প্রবন্ধে
তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর সমগ্র রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে সমাজ
সম্পর্কিত ধ্যান ধারণা হল অন্যতম।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে সমাজঃ
রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রচিন্তায় সমাজ শক্তির প্রাধান্য
পরিলক্ষিত হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সমাজের মধ্যেই ভারতের কল্যান শক্তি নিহিত
আছে। এদেশের স্বাধীনতা সমাজের সমাজের স্বাধীনতার মধ্যেই বর্তমান। এই কারনে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাজকে সংগঠিত করার কথা বলেছেন। তাঁর সমাজচিন্তা
ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন করলে লিম্নলিখিত বিষয়গুলি পাওয়া যায়। যেমন-
১) প্রাণবন্ত ও আত্মশক্তিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানঃ
রবীন্দ্রনাথের মতানুসারে সমাজ হল প্রাণবন্ত একটি
প্রতিষ্ঠান। তাঁর আরও অভিমত হল সমাজ আত্মশক্তিসম্পন্ন এবং সমাজের এই আত্মশক্তি
অবিনশ্বর। ব্যক্তি-মানুষের সম্যক ঐক্য ও সংহতি এবং আত্মোপলব্ধি শুধুমাত্র সমাজের
মধ্যেই সম্ভব।
২) ঐশীশক্তিসম্পন্ন
প্রতিষ্ঠানঃ
রবীন্দ্রনাথের মতানুসারে সমাজ হল এমন একটি প্রতিষ্ঠান
যা ঐশীশক্তিসম্পন্ন। সমাজই হল ঐশীশক্তির অভিব্যক্তি। এই সমাজই মানুষকে তাঁর
দৈবশক্তির অংশ সম্পর্কে সচেতন করে এবং ব্যক্তিবর্গের মানসিক বিকাশ এবং
সম্প্রীতি-সৌভ্রাতৃত্বের সম্প্রসারণের ডাক দেয়।
৩) সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রধান
ভিত্তিঃ
রবীন্দ্রনাথের
মতানুসারে সকল সভ্যতারই একটি মূল আশ্রয় বা ভিত্তি থাকে। ইউরোপের ক্ষেত্রে
রাষ্ট্রই হল সভ্যতা-সংস্কৃতির মূল ভিত্তি। বিপরীতক্রমে ভারতে সমাজই হল
সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রধান ভিত্তি।
৪) বৃহত্তর সমাজঃ
রবীন্দ্রনাথের মতে কেবলমাত্র বৃহত্তর সমাজেই মানুষের সমষ্টি চেতনার বাস্তবায়ন সম্ভব। মানুষের সমষ্টিগত যাবতীয় চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহত্তর সমাজের গুরুত্ব বিরোধ-বিতর্কের উর্দ্ধে। এই কারনে রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রচিন্তায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার থেকে বৃহত্তর সমাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অধিক।
সমালোচনাঃ
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের সমাজচিন্তা বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচিত হয়েছে। নীচে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাজচিন্তার
সমালোচনাগুলি উল্লেখ করা হল-
ক) অস্পষ্ট ধারনাঃ
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের সমাজ সম্পর্কিত ধ্যান ধারণা যথেষ্ঠ অস্পষ্ট। তিনি ইউরোপীয় সমাজব্যবস্থার
সাথে ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার তুলনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সমাজ সম্পর্কিত ধ্যান ধারণা
প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর এটা করতে গিয়ে তিনি তাঁর সমাজ সম্পর্কিত চিন্তা ভাবনাকে জটিল
ও অস্পষ্ট করে তুলেছেন।
খ) অসম্পুর্ণ ধারনাঃ
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের সমাজ সম্পর্কিত ধ্যান ধারণা একটি অসম্পুর্ণ ধারণা। কারন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তাঁর সমাজ সম্পর্কিত ধ্যান ধারনায় সমাজের উৎপত্তি, বিকাশ, কার্যাবলী ইত্যাদি বিষয়
নিয়ে তেমন কেনো আলোচনা করেননি। তিনি কেবল ইউরোপীয় সমাজ ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে
ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার ব্যখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন মাত্র।
গ) স্ববিরোধীতাঃ
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধ্যান ধারনায় স্ববিরোধীতার অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। তিনি
রাষ্ট্রের বিরোধিতা করলেও সমাজকে সংগঠিত করার জন্য এই রাষ্ট্রশক্তির প্রয়োজনীয়তার
কথা বলেছেন।
ঘ) ধর্ম ও নৈতিকতার প্রভাবঃ
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের সমাজচিন্তা ধর্ম ও নৈতিকতার দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছে। তিনি সমাজকে
একটি ঈশ্বরীয় শক্তির অংশবিশেষ বলে মনে করেছেন। তার সমাজ সম্পর্কিত ধ্যান ধারনায়
বাস্তবতার পরিবর্তে ধর্ম ও নীতি নৈতিকতার প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়।
ঙ) জাতীয়তাবাদী ধারনাঃ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাজ সম্পর্কিত চিন্তাধারায় জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। তিনি সমাজের তাত্ত্বিক আলোচনার পরিবর্তে ব্রিটিশ শসনাধীন ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সামনে রেখে তার সমাজচিন্তার কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন।
মূল্যায়নঃ
উপরিউক্ত সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
সমাজ সম্পর্কিত চিন্তাভাবনার গুরুত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায়না। তিনি
রাষ্ট্র ও সমাজের তুলনামূলক আলচনায় যেভাবে সমাজের প্রধান্য প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং
সমাজকে সংগঠিত করার জন্য রাষ্ট্রের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন তা রাষ্ট্রচিন্তার
ইতিহাসে অনবদ্য।
স্বল্প মূল্যে এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস
পেতে চাইলে
সরাসরি যোগাযোগ করো
8967181871
এই নম্বরে
বিশেষ দ্রষ্টব্য
টাইপ করা নোটস(pdf) দেওয়া হয়
এবং
ডিজিটাল মাধ্যমে অনলাইন/ অফলাইন
ক্লাসেরও সুব্যবস্থা আছে
0 মন্তব্যসমূহ