মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার মূল বৈশিষ্ট্য

Ad Code

মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার মূল বৈশিষ্ট্য

মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা


প্রশ্ন-১; মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো। ১০ (২০২০) ৫ (২০২১) ১০ (২০২২)
উত্তরঃ

মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যঃ

ইউরোপের রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে প্রাচীন যুগের শেষ এবং আধুনিক যুগের সূচনার মধ্যবর্তী সময়ে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রচিন্তার ধারাকে মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা বলা হয়। সাধারণত পঞ্চম শতাব্দী থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কে ইউরোপের মধ্যযুগ রূপে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা বিশ্লেষণ করলে এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। এগুলি হল—

১) গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিরোধঃ

মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাষ্ট্র ও গির্জার মধ্যকার বিরোধ। দীর্ঘ সময় ধরে এই বিরোধ বিদ্যমান ছিল। ফলে ধর্ম ও রাজনীতি কোনটাই সঠিক পথে পরিচালিত হয়নি। এয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত পোপ তাঁর আধিপত্য ও কর্তৃত্ব অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হয়েছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে জাতি রাষ্ট্রের উদ্ভবের ফলে পোপের প্রতিপত্তি বহুলাংশে হ্রাস পেতে থাকে।

২) আইন সংক্রান্ত ধারণার বিকাশঃ

মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল আইন সংক্রান্ত ধারণার বিকাশ। স্বাভাবিক আইন, সদর্থক আইন, প্রথাসিদ্ধ আইন প্রভৃতি আইনের ধারণা এই যুগের রাষ্ট্রচিন্তার স্বীকৃতি লাভ করে। এই যুগে আইনকে কোনো ব্যক্তির ইচ্ছা হিসেবে গণ্য না করে সমষ্টিগত ইচ্ছার প্রকাশ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। মধ্যযুগে প্রাকৃতিক আইনকে ঈশ্বরের আইন বলে গণ্য করে গির্জা নিজেকে এই আইনের রক্ষাকর্তা বলে প্রচার করত।

৩) উদারনীতিবাদের সুত্রপাতঃ

মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তায় উদারনীতিবাদের ধারণার সূত্রপাত ঘটেছিল বলে অনেকে মনে করেন। উদারনীতিবাদের মূল কথা হল জনগণের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের নিয়ন্ত্রণ। মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের মধ্যে অনেকেই এই নীতিটিকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। রাজার ক্ষমতার ওপর তিন ধরনের নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছিল। সেগুলি হল—

ক) ঐশ্বরিক নিয়ন্ত্রণ,

খ) সামাজিক চুক্তি এবং

গ) জনগণের ইচ্ছা।

অ্যাকুইনাস সাংবিধানিক বা সীমিত রাজতন্ত্রের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেছিলেন। মার্সিলিও জনপ্রিয় সরকারের পক্ষে মতপ্রকাশ করেন।

৪) সামন্ততন্ত্রের আবির্ভাবঃ

মধ্যযুগে রাজা ও গির্জার মধ্যে বিরোধ যখন তুঙ্গে এবং প্রত্যেকে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার প্রচেষ্টায় ব্যাপৃত ঠিক সেই সময় সামন্ততন্ত্রের আবির্ভাব ঘটে। রাজশক্তি অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় সামন্তপ্রভুরা ক্ষমতাবান হয়ে ওঠে এবং স্ব স্ব এলাকায় আধিপত্য স্থাপন করে ফেলে। প্রকৃতপক্ষে মধ্যযুগে শাসক বলতে সামন্ত প্রভুদের বোঝাত। নামমাত্র শাসক ছিলেন রাজা।


৫) বিশ্বজনীনতাবাদঃ

মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্য হল তার বিশ্বজনীনতাবাদ। রোমানরা বিশ্বাস করতেন যে, তাঁদের সাম্রাজ্য ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রত্যক্ষ ফল এবং তা সার্বজনীন ও শ্বাশত। খ্রিস্টধর্ম এই গভীর বিশ্বাসের প্রতি জোরালো সমর্থন দিয়েছিল। রোম সাম্রাজ্যের মাধ্যমে গির্জা একটি বিশ্বজনীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

৬) স্কলাস্টিসিজমঃ

মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল স্কলাস্টিসিজম্-এর বিকাশ। মধ্যযুগে জ্ঞানচর্চার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সংহতিসাধনের চেষ্টা চলতে থাকে। দার্শনিক ও অন্যান্য পণ্ডিত বিশ্বাস ও যুক্তি, দেবতত্ত্ব ও দর্শন প্রভৃতির মধ্যে সমন্বয়সাধনের জন্য ঐকান্তিকভাবে প্রচেষ্টা চালান। জ্ঞানকে একটি বিচ্ছিন্ন বস্তু হিসেবে না দেখে সামাজিক দৃষ্টি দিয়ে দেখার প্রবণতা ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকে প্রবল হয়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে তা ব্যাপকতা লাভ করে। সাধারণভাবে জ্ঞানের এই ঐক্যসাধনের প্রচেষ্টাকে স্কলাস্টিসিজম্ বলা হয়।

৭) রাজতন্ত্রের বিকাশঃ

রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্র প্রায় সমার্থক ছিল। হার্নশ এর মতে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের চুক্তির গোড়াপত্তন হয় মধ্যযুগে। জনগণ তখন ধারণা পোষণ করতো যে, রাজার ক্ষমতা ঈশ্বর প্রদত্ত তাই তিনি জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করতে পারেননা।


৮) সুসংগঠিত রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিঃ

মধ্যযুগে কোন সুসংগঠিত রাষ্ট্র ছিল না। এই যুগের শেষের দিকে জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে এবং এর প্রভাব বৃদ্ধি পায়। তবে রাষ্ট্রের প্রভাব খুব ব্যাপক ভিত্তিক ছিল না।

৯) সাম্রাজ্যঃ

মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল সাম্রাজ্য। রোম সাম্রাজ্যের পতনের পর তাদের আইনী কাঠামো ভাঙ্গনের মুখে এসে দাঁড়ায়। রাষ্ট্রচিন্তা ও দর্শন চিন্তার ক্ষেত্রে ভাটা পড়লেও মধ্যযুগের শাসন ব্যবস্থায় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার চিন্তা ও ধারাবাহিকতা ছিল একটি বাস্তব সত্য।

১০) অবৈজ্ঞানিক রাষ্ট্রচিন্তাঃ

অনেকের মতে মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা ছিল অবৈজ্ঞানিক। তবে আধুনিক বিচারে কোনক্রমেই তা গুরুত্বহীন ছিলনা। মধ্যযুগের সংঘাতময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উপর ভর করেই আধুনিক যুগের আগমন ঘটেছে। মধ্যযুগের সুদীর্ঘ সংগ্রামের ফসল হচ্ছে আধুনিক ইউরোপ।

লেখক

জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ

     

এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস


(বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সহ)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


Main Menu


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code