ম্যাকিয়াভেলির ক্ষমতা তত্ত্ব

Ad Code

ম্যাকিয়াভেলির ক্ষমতা তত্ত্ব

ম্যাকিয়াভেলির ক্ষমতা তত্ত্ব

প্রশ্ন; ক্ষমতা সম্পর্কে ম্যাকিয়াভেলির ধারণা আলোচনা করো। ১০ (২০১৯) ১০ (২০২১) ৫ (২০২২)
উত্তরঃ

ম্যাকিয়াভেলির ক্ষমতা তত্ত্বঃ

        ম্যাকিয়াভেলি প্রচলিত অর্থে কোনো রাষ্ট্র দার্শনিক  ছিলেন না। পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রতত্ত্ব গড়ে তোলার দিকে তাঁর কোনো  আগ্রহ ছিলনা। রাষ্ট্রতত্ত্বের আঙ্গিক রীতিও তিনি অনুসরণ করেননি। অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তিনি অতি সাধারনভাবে ‘ক্ষমতার বেদ’ রচনা করেন। তাঁর মতে, ক্ষমতাই রাষ্ট্রের একমাত্র উদ্দেশ্য। এর বাইরে রাষ্ট্রের অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারেনা।

        তাঁর এই ক্ষমতা তত্ত্ব ব্যখ্যা-বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি দেখা যায়। যেমন-

১) ক্ষমতার রাজনীতিঃ

ম্যাকিয়াভেলি মনে করতেন যে, সব রাজনীতিই ক্ষমতার রাজনীতি। শক্তিই হল আধিপত্যের উৎস। প্রজাবর্গের আনুগত্য আদায় করতে এবং রাজ্যশাসনের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দূর করে শাসককে নির্দ্বিধায় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। ম্যাকিয়াভেলির কাছে লক্ষ্যই বড়ো। লক্ষ্য যদি ভালো হয়, তাহলে সেই ভালো লক্ষে পৌঁছোনোর জন্য যে-কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

২) ক্ষমতা দখলের পদ্ধতিঃ

তাঁর দ্য প্রিন্স নামক গ্রন্থে ম্যাকিয়াভেলি ক্ষমতা দখলের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে, জনগণ যেখানে ক্ষমতালিপু শাসকের নিজের ভাষাভাষী লোক, সেখানে ক্ষমতা দখল করা সহজ। সেক্ষেত্রে শাসককে কেবল পূর্বসূরির উত্তরাধিকারের দাবিকে নির্মূল করতে হয়, পুরোনো প্রতিষ্ঠানগুলির ধ্বংসসাধন প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সমস্যার জটিলতা দেখা দেয় যখন ভাষা ও প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে প্রকট পার্থক্য থাকে। সেক্ষেত্রে তিনি সেখানকার রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে পুরোপুরি ধ্বংস করার সুপারিশ করেন। ম্যাকিয়াভেলির মতে, ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ধর্ম বা নৈতিকতার কোনো স্থান নেই।

৩) ক্ষমতা সুরক্ষিত করার পদ্ধতিঃ

        ক্ষমতা দখল করার পর সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা অনুসরণ করতে ম্যাকিয়াভেলি শাসককে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন-

ক) প্রতক্ষ্য শাসনঃ

ম্যাকিয়াভেলি প্রত্যক্ষ রাষ্ট্রশাসনে বিশ্বাসী ছিলেন। কারণ, এই ধরনের শাসন পদ্ধতিতে রাজা ও প্রজার মধ্যে প্রত্যক্ষ সংযোগ গড়ে ওঠে বলে শাসকের পক্ষে তাঁর সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব রক্ষার কাজ সহজ হয়।

খ) সামন্ত্রতান্ত্রিক শাসনের বিরোধিতাঃ

ম্যাকিয়াভেলি সামন্ততান্ত্রিক প্রভুদের সহায়তায় শাসনকার্য পরিচালনার ঘোর বিরোধী ছিলেন। সামন্ততান্ত্রিক প্রভুরা শাসনকার্যে সহায়তা করলে অনেক সময় তারা নিজেদের শাসকের সমকক্ষ বলে ভাবতে শুরু করে এবং এর ফলে শাসকের ক্ষমতার প্রাধান্য ক্ষুব্ধ হয়।

গ) সুসংগঠিত ও শক্তিশালী সেনাবাহিনীঃ

ম্যাকিয়াভেলির মতে, সুসংগঠিত সেনাবাহিনীই রাষ্ট্রের শক্তির মূল উৎস। দেশের ঐক্যের প্রয়োজনে ভাড়াটে সৈন্যের ওপর নির্ভরশীল না হতে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। রাজ্যের নাগরিক ও সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে সৈন্য সংগ্রহ করা উচিত বলে তিনি মনে করতেন।

ঘ) অনৈতিক কাজঃ

ম্যাকিয়াভেলির মতে, রাষ্ট্রশক্তির সুরক্ষার স্বার্থে শাসক যে-কোনো পাপাচারেই লিপ্ত হতে পারেন। কোনো অনৈতিক ও অমানবিক কাজ যদি শাসনব্যবস্থায় স্থায়িত্ব ও উন্নতি নিয়ে আসতে পারে, তাহলে তার সঙ্গে যুক্ত থাকাই শ্রেষ্ঠ রাজধর্ম। বিবেকের শাসনের ব্যাপারটি এক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক ও অর্থহীন।

ঙ) ধূর্ততা ও ছলনার আশ্রয়ঃ

ম্যাকিয়াভেলির মতে, শাসককে সিংহের মতো বলবান এবং শৃগালের মতো ধূর্ত হতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ম্যাকিয়াভেলি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, রাজাকে প্রজাদের সামনে এমনভাবে চলতে হবে, যাতে তারা তাঁর রাজ্যশাসনের কৌশলটি বুঝতে না পারে। বাইরে তিনি হবেন দয়ালু ও ধর্মপরায়ণ। কিন্তু রাজনীতিতে তিনি এইসব গুণ পরিহার করে চলবেন।

৪) ক্ষমতার সম্প্রসারনঃ

        ম্যাকিয়াভেলির মতে, দেহের বৃদ্ধিসাধন যেমন সুস্থ দেহের জীবনীশক্তি প্রকাশের পরিচয় বহন করে, তেমনি রাষ্ট্রক্ষমতার প্রবণতাই হল তার আত্মসম্প্রসারণ। তাঁর মতে, যে রাষ্ট্র কোনোরকমে নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে, তার ধ্বংস অনিবার্য। শক্তিসাধনার সাহায্যে নিজেকে সম্প্রসারিত করাই হল স্বাধীন রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বাভাবিক ধর্ম।

সমালোচনাঃ

        ম্যাকিয়াভেলির ক্ষমতাতত্ত্ব থেকে বোঝা যায় যে, ঈশ্বরের কৃপা ও নীতিবাক্যে তাঁর আস্থা ছিলনা। অদৃষ্টের চেয়ে জয়লাভকেই বড়ো করে দেখেছেন তিনি। অনেকের চোখে এই মতবাদ নিষ্ঠুর পাশবিকতার অভিব্যক্তি। বস্তুত, রাজনৈতিক মিথ্যাচার, কুটিলতা ও নীতিজ্ঞানহীন ক্রিয়াকলাপকে সমর্থন ক'রে তিনি রাজনীতিকে পাশবিক শক্তি ও সংকীর্ণ স্বার্থপরতার অন্ধকার জগতে নামিয়ে এনেছেন।

শাসকের চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রসঙ্গে ম্যাকিয়াভেলি যা বলেছেন, তা অত্যন্ত ভয়াবহ। কোনোপ্রকার সামাজিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব না দিয়ে তিনি অবাস্তব এবং জঙ্গি ও আগ্রাসী মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন। তাঁকে শক্তি-রাজনীতির জনক বলে অভিহিত করা হয়। এ কথাও বলা হয় যে, তিনি জঙ্গি ও স্বৈরতন্ত্রী শাসন ও কলাকৌশলের প্রবক্তা ছিলেন।

মূল্যায়নঃ

        উপরিউক্ত সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে ম্যাকিয়াভেলির ক্ষমতা তত্ত্বের গুরুত্বকে কোনোভাবে অস্বীকার করা যায়না। কারন তৎকালীন  ইটালির রাজনৈতিক দুরবস্থা থেকে মুক্তির অন্যতম পথ ছিল তার এই ক্ষমতা তত্ত্ব।

লেখক

জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ

     

এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস


(বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সহ)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


Main Menu


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code