জে এস মিলের স্বাধীনতার ধারণা

Ad Code

জে এস মিলের স্বাধীনতার ধারণা

জে এস মিলের স্বাধীনতার ধারনা


প্রশ্ন- ১; জন স্টুয়ার্ট মিলের স্বাধীনতার ধারণাটি আলোচনা করো। ১০ (২০২২)
অথবা
প্রশ্ন-২; সংক্ষেপে জে এস. মিলের স্বাধীনতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো। ৫(২০১৯)
উত্তরঃ 

ভূমিকাঃ

        রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে ফরাসি দার্শনিক মিল উনবিংশ শতাব্দীতে তাঁর রাষ্ট্র সম্পর্কিত চিন্তা ভাবনার কাঠামো গড়ে তোলেন। তাঁর লেখা দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল, সিস্টেম অফ লজিক(১৮৪৩), অন লিবার্টি(১৮৫৯)। মিলের সমগ্র রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তাঁর স্বাধীনতার ধারণা।

মিলের মতে স্বাধীনতাঃ

        মিলের রাষ্ট্রচিন্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল তাঁর স্বাধীনতা-সংক্রান্ত তত্ত্ব। তাঁকে এরূপ তত্ত্বের অন্যতম প্রবক্তারূপে চিহ্নিত করা হয়। কারণ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য এতটা জোরালো আবেদন তাঁর আগে অন্য কেউই এরূপ সুসংবদ্ধভাবে উপস্থাপন করেননি। মিল দুই দিক থেকে তার স্বাধীনতার ধারণা ব্যখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। যেমন-


স্বাধীনতার প্রথম সংজ্ঞাঃ

মিলের মতে স্বাধীনতা হল 'নিজের ওপর এবং নিজের দেহ ও মনের ওপর ব্যক্তির সার্বভৌমিকতা। এর দ্বারা মিল বোঝাতে চেয়েছেন যে, নিজ বিবেচনা অনুযায়ী নিজের মঙ্গলসাধনের প্রচেষ্টার মধ্যেই ব্যক্তির প্রকৃত স্বাধীনতার প্রকাশ ঘটে। মিল বলেছেন যে, এই স্বাধীন জীবনযাপনে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ মোটেই কাম্য নয়। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ একমাত্র তখনই ব্যক্তির স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, যখন এই ব্যক্তির স্বাধীন কার্যকলাপ সমাজের অন্যান্য ব্যক্তির স্বাধীনতা লাভের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়, অন্যথায় নয়। এই প্রসঙ্গে মিল ব্যক্তির কার্যাবলিকে আত্মকেন্দ্রিক (self-regarding) এবং পরকেন্দ্রিক (other-regarding) এই দুভাগে ভাগ করেছেন। আত্মকেন্দ্রিক বা নিজ স্বার্থ-সংক্রান্ত কার্যাবলির মধ্যে ব্যক্তির স্বাধীনতা অবাধ বা চরম। নিজের এলাকায় ব্যক্তি পুরোপুরি স্বাধীন। কিন্তু পরকেন্দ্রিক কাজের ক্ষেত্রে ব্যক্তির ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে অপরের স্বার্থ যুক্ত থাকে। সমাজের অন্য সদস্যদের ওপর এর প্রভাব থাকে। তাই এক্ষেত্রে রাষ্ট্রী হস্তক্ষেপের কিছু যৌক্তিকতা আছে বলে মিল মনে করেছেন।

স্বাধীনতার দ্বিতীয় সংজ্ঞাঃ

স্বাধীনতা সম্পর্কে মিল-প্রদত্ত দ্বিতীয় সংজ্ঞাটি প্রথম সংজ্ঞা থেকে কিছুটা পৃথক। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে মিল বলেছেন, “স্বাধীনতা হল নিজের পছন্দমতো কর্মসাধন এবং সেই সাথে কোনো মানুষই চাইবে না সেতু ভেঙে নদীর মধ্যে পড়ে যেতে”। তিনি মনে করতেন যে, সব ক্ষেত্রে মানুষ তার নিজ স্বার্থের শ্রেষ্ঠ বিচারক না-ও হতে পারে। তাই এইসব ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রকৃত ইচ্ছা কী, সে ব্যাপারে তাকে অবহিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। মিলের মতে, ইচ্ছামতো স্বাধীন চিন্তা বা কর্ম করা ব্যক্তির মৌলিক অধিকার হলেও অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে সেই স্বাধীনতা রক্ষা পেতে পারে। একটি উদাহরণের সাহায্যে তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। কোনো ব্যক্তির যখন এমন একটি সেতু অতিক্রম করতে ইচ্ছা করে, যে-সেতুটি বিপজ্জনক হলেও সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোনো ধারণাই নেই। এমতাবস্থায় তাকে বাধা দেওয়ার মধ্যে কোনো স্বাধীনতা হরণের ব্যাপার থাকে না। বরং, তাকে বাধাদানের মাধ্যমে তার বৃহত্তর ইচ্ছা (সেতু ভেঙে নদীর মধ্যে না পড়া) পূরণ হয়।


সমালোচনাঃ

        মিলের স্বাধীনতার ধারণা বিভিন্নদিক থেকে সমালোচিত হয়েছে। যেমন-

১) শূন্যগর্ভ স্বাধীনতাঃ

মিলের স্বাধীনতা তত্ত্বের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে বার্কার বলেছেন যে, মিল বাস্তবে শূন্যগর্ভ স্বাধীনতা ও বিমূর্ত ব্যক্তির প্রবক্তা ছিলেন। মিল অধিকার তত্ত্বের কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করেননি। যে অধিকারের মাধ্যমে স্বাধীনতা কার্যকর হয়, সেই অধিকার সম্পর্কে তাঁর কোনো সুস্পষ্ট ধারণা ছিলনা। লক্, রুশো ও গ্রিনের তত্ত্বে যে অধিকারের ধারণা পাওয়া যায়, মিলের তত্বে তা অনুপস্থিত।

২) প্রবর স্বাধীনতাঃ

তিনি সমগ্র সমাজের প্রেক্ষিতে স্বাধীনতাকে বিচারবিশ্লেষণ করেননি। তাঁর কাছে সাধারণ মানুষের থেকে প্রবরদের (elite) গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। তিনি শিক্ষিত এবং জ্ঞানীগুণী ব্যক্তির স্বাধীনতা ও গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, আপামর জনগণের স্বাধীনতা ও গুরুত্বকে নয়।

৩) সংখ্যালঘিষ্ঠের মতামতঃ

একশো জনের মধ্যে নিরানব্বই জনের বিরুদ্ধে আত্মবিশ্বাসসম্পন্ন একজন মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য মিল যা বলেছেন, সামগ্রিক আলোচনার প্রেক্ষিতে তা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়না। ব্যক্তিস্বাধীনতা সম্পর্কে তাঁর প্রারম্ভিক বক্তব্য পরবর্তীকালে বিভিন্নভাবে সংশোধিত হয়েছে।

৪) রাষ্ট্রীয় হস্ত্যক্ষেপঃ

ব্যাক্তির আত্মকেন্দ্রিক ও পরকেন্দ্রিক কাজের মধ্যে পৃথকীকরণ মিলের সমাজদর্শনের একটি দুর্বল দিকেরই প্রকাশ মাত্র। বস্তুত, ব্যক্তিমানুষের কোনো কাজই বিশুদ্ধ আত্মকেন্দ্রিক বলে বিবেচিত হতে পারে না। ব্যক্তি মানুষ হল সামাজিক একক। তার কোনো কাজই সমাজ নিরপেক্ষ হতে পারেনা। যেহেতু বাস্তবে সব কাজই পরকেন্দ্রিক, সেহেতু ব্যক্তির যে-কোনো কাজের ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হতে পারে।

৫) স্ববিরোধিতাঃ

        মিলের স্বাধীনতা তত্ত্বে স্ববিরোধিতার উপস্থিতি দেখা যায়। একদিকে তিনি ব্যাক্তি স্বাধীনতার ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিরোধিতা করেছেন অন্যদিকে তিনিই আবার রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন।

মূল্যায়নঃ

        উপরিউক্ত সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও মিলের স্বাধীনতা তত্ত্বের গুরুত্বকে কোনোভাবে অস্বীকার করা যায়না। মিল স্বাধীনতার ক্ষেত্রকে যেভাবে যথাসম্ভব সম্প্রসারণের কথা বলেছেন তা বর্তমান সময়েও যথেষ্ঠ প্রাসঙ্গিক।

লেখক

জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ

এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস


(বিগত বছরের প্রশ্নপত্র সহ)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-


Main Menu


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code