ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠান
১) ব্রেটন উডস সিস্টেম কাকে বলে? এগুলি কেনো গড়ে উঠেছে?
ভূমিকাঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইউরোপীয় দেশগুলি ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলা করা, নতুন মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা গড়ে তোলা, আন্তর্জাতি বানিজ্যের বিস্তার ঘটানো প্রভূতি।
গঠনঃ
দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে বিশ্ব অর্থনীতি খুবই নড়বড়ে অবস্থায় চলে আসে। আন্তর্জাতিক
লেনদেনের ক্ষেত্রে কার্যকরী বিনিময় মাধ্যম চালু না থাকায় বানিজ্যে মুদ্রা বিনিময়
ব্যাবস্থা ভেঙে পড়ে এবং অর্থনীতির বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এছাড়া বাণিজ্যিক
ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এবং সুনিদিষ্ট নিয়মকানুন না থাকায় আন্তর্জাতিক
বানিজ্যও বাধাপ্রাপ্ত হয়। বিশ্ব-অর্থনীতির এই চরম সংকট থেকে পরিত্রাণের উদ্দেশ্যে
১৯৪৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হ্যাম্পশায়ারের ব্রেটন উডস নামক স্থানে
বিশ্বের দেশের জনপ্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে
বিশ্বের অর্থ ব্যবস্থার সংস্কার বা আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে কতগুলি সংগঠন গড়ে
তোলার উদ্যোগ নেয়। এই সংগঠনগুলোই ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠান নামে পরিচিত। এই
সংগঠনগুলি হল- বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থ্যা।
গড়ে ওঠার কারনঃ
ভেঙ্গে পড়া বিশ্ব অর্থনীতির পুনর্গঠন বা
সংস্কারের উদ্দেশ্যে ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠানগুলি গঠিত হলেও এর গড়ে ওঠার পেছনে আরো
বিবিধ কারণ বর্তমান। নীচে ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে ওঠার কারণ নীচে আলোচনা
করা হল-
১)
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলাঃ
দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধত্তর কালে সমগ্র বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। তৃতীয় বিশ্বের
দেশগুলির সাথে সাথে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থাও ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। এই সময়
বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ এবং প্রশাসকগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে বিশ্বের কোন দেশের
অর্থব্যবস্থা স্বতন্ত্র নয়। বিশ্বের প্রতিটি দেশের অর্থব্যবস্থা অখন্ড ও
অবিচ্ছেদ্য। তাই বিশব-অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হলে প্রতিটি দেশের অর্থব্যবস্থাকে
একটি অভিন্ন নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে এবং একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে
তুলতে হবে।
২) নির্দিষ্ট
বিনিময় মুদ্রা নির্ধারণঃ
আন্তর্জাতিক
ক্ষেত্রে বিনিময়ের জন্য সুনির্দিষ্ট, কার্যকরী ও স্থায়ী মুদ্রা ব্যবস্থা
প্রতিষ্ঠা করাই হল ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অন্যতম লক্ষ্য। এক্ষেত্রে
ব্রেটন উডস এর প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র তার মুদ্রাকে সোনার পরিবর্তে মার্কিন ডলারের
বিনিময়ে রূপান্তর করতে সমর্থ হয়।
৩)
সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাঃ
আন্তর্জাতিক
প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্রসংঘ কেবল শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত হয়নি।
এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা। বিশ্বের
সমস্ত রাষ্ট্র বা জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য
দরকার একটি ফলপ্রসূ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংগঠন যা সাড়া বিশ্বের অর্থনীতিকে সঠিক
পথে পরিচালিত করবে এবং উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির ভেঙেপড়া অর্থনীতির সংস্কার ও
পুনরুদ্ধারের কাজ করবে।
৪) সমাজতন্ত্রের
বিস্তার রোধঃ
সমাজতন্ত্রের
বিস্তার রোধকে ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠান গঠনের অন্যতম লক্ষ্য বলে মনে করা যেতে পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট বুঝতে পারে সমাজতন্ত্রের
গতিকে প্রতিহত করতে হলে একদিকে যেমন সামরিক প্রস্তুতি দরকার তেমনি দরকার ইউরোপসহ
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে অংশ নেওয়া। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভাবনা তাদের হাতে ছেড়ে দিলে রাশিয়া তথা সমাজতন্ত্রের প্রভাবে
তারা প্রভাবিত হতে পারে। সুতরাং সমাজতন্ত্রের বিস্তার বা প্রভাব রোধের জন্য
আন্তর্জাতিক স্তরে অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপকরণ সংগ্রহ ও বিস্তারের ব্যবস্থা একান্ত
দরকার।
৫) আন্তর্জাতিক
বাণিজ্যের বিস্তারঃ
ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠান গঠনের অন্যতম
উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিস্তার ঘটানো। এই প্রতিষ্ঠান গঠিত হওয়ার
পূর্বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা বর্তমান ছিল। কোনো
কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন দেশ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন
রকম শর্ত ও বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করতে থাকে। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার
বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। সুতরং এইসব সমস্যার সমাধান কল্পে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন
প্রতিষ্ঠা করা ছিল একান্ত জরুরী।
স্বল্প মূল্যে এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস
পেতে চাইলে
সরাসরি যোগাযোগ করো
8967181871
এই নম্বরে
বিশেষ দ্রষ্টব্য
টাইপ করা নোটস(pdf) দেওয়া হয়
এবং
ডিজিটাল মাধ্যমে অনলাইন/ অফলাইন
ক্লাসেরও সুব্যবস্থা আছে
0 মন্তব্যসমূহ