কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব; Saptanga theory

Ad Code

কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব; Saptanga theory

 

কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব



ভূমিকাঃ

কৌটিল্যের রাষ্ট্র সম্পর্কিত রাজনৈতিক চিন্তাধারার মধ্যে অন্যতম মতবাদ হল সপ্তাঙ্গ মতবাদ বা সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব। মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মত তিনি রাষ্ট্রব্যবস্থারও  সাতটি অঙ্গপ্রতঙ্গের উল্লেখ করেছেন। সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব অনুযায়ী রাষ্ট্রের এই  ৭টি অঙ্গ বা উপাদান হল- স্বামী, অমাত্য, জনপদ, দূর্গ, কোশ, দণ্ড এবং মিত্র।


১) স্বামীঃ

কৌটিল্য সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের প্রথম ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল স্বামী। তাঁর মতে রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে স্বামীকে রাজাও বলা হয়। স্বামী বা রাজা হলেন সকল কর্তৃত্বের উৎস ও সমগ্র প্রশাসন ব্যবস্থার ভরকেন্দ্র। স্বামী বা রাজা দণ্ড প্রয়োগের মাধ্যমে সবরকম অরাজকতা থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষা করেন। কৌটিল্যের মতে স্বামী বা রাজা সামন্ত্রতান্ত্রিক শাসক ছিলেন না, তিনি ছিলেন সার্বভৌম। তিনি কারো কাছে আনুগত্যশীল ছিলেন না।

 কৌটিল্য স্বামী বা রাজার চারটি গুণাবলির  কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল-

ক) অভিগামিক গুণঃ সত্যনিষ্ঠা, ধর্মপরায়ণ, বিনয়, শিক্ষার আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি হল স্বামী বা রাজার অভিগামিক গুণ।

খ) প্রজ্ঞাপন গুনঃ  কোনো সমস্যা দ্রুত ও সঠিকভাবে বুঝে নেওয়া, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রভূতি হল স্বামী বা রাজার প্রজ্ঞাপন গুণ।

গ) উত্থান গুণঃ  সাহস এবং দ্রুততার সঙ্গে সবরকম কাজ শেষ করার ক্ষমতাই হল স্বামী বা রাজার উত্থান গুণ।

ঘ) আত্মসম্পদ গুণঃ ইন্দ্রিয় সংযম, বাক্য সংযম, স্মৃতিশক্তি, বিপদকালে অবিচলিত থাকা প্রভূতি হল স্বামী বা রাজার  আত্মসম্পদ গুণ।

২) অমাত্য বা মন্ত্রীঃ

কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল অমাত্য বা মন্ত্রী। অমাত্য বলতে মন্ত্রীসহ সকল উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের বোঝায়। কৌটিল্যের মতে আমাত্য অবশ্যই দেশজ হবেন এবং স্বামী বা রাজার অনুগত থাকবেন। অমাত্যদের প্রধান কাজ হল রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বামী বা রাজাকে সর্বতভাবে সাহায্য করা। কৌটিল্যের মতে, রাষ্ট্রের সামর্থ্য অনুযায়ী অমাত্যদের নিয়োগ করতে হবে। ওপর। এক্ষেত্রে ধর্ম, অর্থ, কাম ও ভয় চার প্রকার উপধার দ্বারা তাদের সততার পরীক্ষা নেওয়া উচিত এবং অমাত্য বা মন্ত্রীদের অবশ্যই মন্ত্রীকে অবশ্যই প্রজ্ঞা, সংহতি, সাহস ও আনুগত্য প্রভূতি গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে। কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্রে বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন ধরনের‌ অমাত্য বা মন্ত্রী নিয়োগের কথা বলেছেন। যেমন- পুরোহিত, সমাহর্তা, সন্নিধাতা, কোশাধ্যক্ষ, রাজদূত, দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিচারক প্রমুখ।


৩) জনপদঃ

কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল জনপদ। কৌটিল্য জনপদ বলতে রাষ্ট্রের ভূখণ্ড ও তার অধিবাসীদের বুঝিয়েছেন। উর্বরভূমি, প্রচুর অরণ্য সম্পদ, খনিজ সম্পদ এবং উৎকৃষ্ট মানের গোচারণভূমিকে তিনি আদর্শ ভূখণ্ড বলেছেন। জনসমষ্টি বা অধিবাসী প্রসঙ্গে বলেছেন- প্রতিটি গ্রামে কমপক্ষে একশত এবং সর্বাধিক পাঁচশত পরিবার বসবাস করবে। এই জনসমষ্টি রাজভক্ত, সুভদ্র, কৃষিজীবী এবং স্বামী বা রাজার প্রতি অনুগত থাকবে।

৪) দুর্গঃ

কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল দূর্গ। সাধারণত সুরক্ষিত রাজধানীর পরিকল্পনাকেই কৌটিল্য দূর্গ বলে অবহিত করেছেন। কৌটিল্য দূর্গগুলিকে সাম্রাজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করে। রাষ্ট্রের সুরক্ষার জন্য কৌটিল্য চার ধরনের দুর্গের কথা বলেছেন। এগুলি হল- জলদূর্গ, গুহা বা পার্বত্য দূর্গ, মরুদূর্গ এবং বনদূর্গ


৫) কোষঃ  

কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের পঞ্চম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল কোষ।  কৌটিল্যের মতে কোষ হল এমন এক অর্থভাণ্ডার যা রাজা রাজস্ব সংগ্রহের মাধ্যমে উপার্জন করেন অথবা অন্য কোনো সৎ উপায়ে সংগ্রহ করেন। কোষ বা রাজার আর্থিক সক্ষমতার ওপর রাষ্ট্রের শক্তি বা সামর্থ অনেকটাই নির্ভশীল।


৬) দণ্ডঃ

কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের ষষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল দন্ড। কৌটিল্য দন্ড বলতে রাষ্ট্রের দমনমূলক ক্ষমতাকে বুঝিয়েছেন এক্ষেত্রে সেনাবাহিনী হল দন্ডের অন্যতম অংশ। এই দণ্ড বা সেনাবাহিনীর ওপরই রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব নির্ভরশীল। কৌটিল্য মূলত হস্তী, অশ্ব, রথ এবং পদাতিক এই চার প্রকার সেনার কথা বলেছেন। সেনাবাহিনী হবে বংশানুক্রমিক, অনুগত, যুদ্ধে পারদর্শী, অজেয় এবং প্রশিক্ষিত। সেনারা রাজার ইচ্ছায় পরিচালিত হবে এবং রাজার নির্দেশ মত কাজ করবে। সেনাবাহিনীর গঠিত হবে সাধারণত ক্ষত্রীয়দের দ্বারা, তবে জরুরি ভিত্তিতে নিম্নবর্ণের মানুষদেরও  সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।


৭) মিত্রঃ

কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্বের সপ্তম অর্থাৎ সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি হল মিত্র। কৌটিল্যের মতে মিত্র হল সেই, যার কাছ থেকে বিপদের কোনো সম্ভাবনা থাকেনা। আদর্শ মিত্র হবে বংশানুক্রমিক ও অকৃত্রিম। তবে মিত্র সাময়িক এবং কৃত্রিমও হতে পারে। কৌটিল্য দু-ধরনের মিত্রের কথা বলেছেন। যথা-

ক) সহজ মিত্রঃ (Sahaja): পিতামহ ও পিতার সময়কাল থেকে যে ধরনের ব্যক্তিদের সঙ্গে মিত্রতার সম্পর্ক রয়েছে তারা হল সহজমিত্র।

খ) কৃত্রিম মিত্র (Kritrima): এই ধরনের মিত্র হল অর্জিত মিত্র। এই ধরনের মিত্রতা স্বাস্থ্য, সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা দেয়। কৌটিল্যের মতে—সহজমিত্ৰতা কৃত্রিমের চেয়ে উৎকৃষ্ট বা শ্রেষ্ঠ।

 

মূল্যায়নঃ

মানব শরীরে যেমন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থাকে, তেমনি সাতটি অঙ্গের সম্মিলিত ফলই রাষ্ট্রশরীর। পরস্থিতি বিবেচনায় গুরুত্ব ও প্রাধিকারে পরিবর্তন ঘটলেও সপ্তাঙ্গ হলো একটি একক, যার সমষ্টিগত মূল্যই বেশি। কৌটিল্য মনে করেন, সপ্তাঙ্গ মিলিত হয়ে কার্যনির্বাহ করলে রাষ্ট্ররূপ শরীর সুপরিচালিত হবে। অন্যথায়, ব্যাধি বা প্রকোপে আক্রান্ত হয়ে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।

 

স্বল্প মূল্যে এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস 

 পেতে চাইলে

সরাসরি যোগাযোগ করো 

8967181871 

এই নম্বরে 

বিশেষ দ্রষ্টব্য

টাইপ করা নোটস(pdf) দেওয়া হয়   

এবং 

ডিজিটাল মাধ্যমে অনলাইন/ অফলাইন 

ক্লাসেরও সুব্যবস্থা আছে


Main Menu

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code