প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য

Ad Code

প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য


প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্য



ভূমিকাঃ

        ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তা অনেক বেশি প্রাচীন। আনুমানিক দু-হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতে রাষ্ট্রচিন্তার সুত্রপাত ঘটেছিল। প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রচিন্তা বৈদিক শাস্ত্রসমূহ, ধর্মসুত্রসমূহ, মহাকাব্য সমূহ, বৌদ্ধ ও জৈন গ্রন্থাদি, পণিনি ও পতঞ্জলি এবং সর্বপরি কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।


প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যঃ

        প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি পাওয়া যায়। যেমন-

১) তত্ত্ব ও বাস্তবতাঃ

প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রদার্শনিকরা বিশেষভাবে বাস্তববাদী ছিলেন। রাষ্ট্রনীতির বাস্তব সমস্যার ওপর তারা অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রনৈতিক বিষয়াদির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতেন। তবে তারা রাষ্ট্রব্যবস্থার তাত্ত্বিক কাঠামোকে পুরোপুরি অবহেলা বা উপেক্ষা করেননি। তাঁরা তত্ত্ব ও বাস্তবের মধ্যে যথাসম্ভব সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছেন।


২) সুসংবদ্ধ ও ধারাবাহিকতাঃ

প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে সুসংবদ্ধতা ও ধারাবাহিকতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার অনেক ক্ষেত্রে খাপছাড়া ও বিচ্ছিন্ন প্রকৃতির। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার ওপর তেমন কোনো প্রমাণ্য গ্রন্থ পাওয়া যায়না।


৩) ধর্ম ও নীতিবোধঃ

প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তাবিদরা ধর্ম ও নীতিবোধ দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত। প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্র ব্যবস্থার মাধ্যমে ধর্ম ও নীতিবোধের সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ আয়োজন দেখা যেত।


৪) রাষ্ট্র ও রাজতন্ত্রঃ

প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তায় রাষ্ট্রের পরিবর্তে রাজতন্ত্রের অবিসংবাদিত প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এই রাজতন্ত্রকে কেন্দ্র করে প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তা আবর্তিত বা বিবর্তিত হয়েছে। রাজতন্ত্রের প্রাধান্য থাকায় ব্যাক্তি জীবনে চরম রাষ্ট্রীয়  কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি।


৫) রাষ্ট্রচিন্তার পরিধিঃ

প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার পরিধি ব্যাপক। রাষ্ট্র-রাজনীতি ছাড়াও প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তায় অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সমাজতত্ত্ব, ন্যায়নীতি এমনকি পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা আছে।

৬) প্রাচীনত্বঃ

প্রাচীনত্বের দিক থেকে পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তার তুলনায় প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি প্রাচীন বলে মনে করা হয়। আনুমানিক দু-হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতে রাষ্ট্রচিন্তার সুত্রপাত ঘটেছিল। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের পূর্বেও ভারতে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কিত মতবাদ প্রচলিত ছিল।


৭) রাষ্ট্র ও সমাজ সদর্থকঃ

        প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রদর্শনে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য করা হয়নি।  রাষ্ট্র  ও সমাজের মধ্যে ধারণাগত পার্থক্য যেমন ছিল না, তেমনি কার্যগত বা ভূমিকাগত বিচারেও কোনো পার্থক্য করা হয়নি।  স্বভাবতই প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তায় 'রাষ্ট্র' 'সমাজ' শব্দ দুটি বহুলাংশে সমার্থকভাবে ব্যবহার করা হত।


৮) রাজনীতির স্বতন্ত্র আলোচনা অমিলঃ

        প্রকৃত প্রস্তাবে প্রাচীন ভারতে রাজনীতিকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র কোন আলোচনার বিষয় হিসাবে বিবেচনা করা হত না।রাজনীতিক বিষয়কে সমাজজীবনের অন্যান্য বিষয়াদির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয় হিসাবেই ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ করা হত। রাজনীতিক বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন আলোচনা শুরু হয়েছে অনেক পরে।


৯) বর্ণ ও জাতিভেদ প্রথার সমর্থনঃ

প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রচিন্তায় বর্ণ জাতিভেদ ব্যবস্থার সমর্থনসূচক আলোচনা আছে। সনাতন ভারতীয় রাষ্ট্রদর্শন অনুযায়ী সমাজ ব্যবস্থায় প্রতিটি জাতির স্বতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বর্তমান। এই সমস্ত জাতিগত ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সুস্থ সমাজজীবন সুনিশ্চিত হয়।


মূল্যায়নঃ

        প্রাচীন ভারতের রাজনীতিক প্রতিষ্ঠান ও মতবাদ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে বহু ও বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন- নির্ভরযোগ্য উৎস বা  প্রামাণ্য গ্রন্থের অভাব, রাষ্ট্র তাত্ত্বিকদের সঠিক নাম ও সময়কাল সম্পর্কে বিতর্ক,  বিভিন্ন শব্দ বা পদের যথাযথ ব্যাখ্যা নিয়ে বিতর্ক প্রভূতি। তবে এইসব সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও, প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার গুরুত্বকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায়না। কারন আধুনিক ভারতের অনেক রাষ্ট্র দার্শনিকও প্রাচীন ভারতীয় চিন্তাভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।

 

স্বল্প মূল্যে এই পেপারের ওপর সমস্ত নোটস 

 পেতে চাইলে

সরাসরি যোগাযোগ করো 

8967181871 

এই নম্বরে 

বিশেষ দ্রষ্টব্য

টাইপ করা নোটস(pdf) দেওয়া হয়   

এবং 

ডিজিটাল মাধ্যমে অনলাইন/ অফলাইন 

ক্লাসেরও সুব্যবস্থা আছে


Main Menu


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code