সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য

Ad Code

সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য

 


প্রশ্ন-১;  সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো।

উত্তরঃ 

সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্যঃ

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় যতগুলি দৃষ্টিভঙ্গি প্রচলিত আছে, সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। নীচে সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যগুলি আলোচনা করা হল-  

i) মূল্যবোধ ও নৈতিকতার ক্ষেত্রে পার্থক্যঃ

সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তারা মূল্যবোধযুক্ত আলোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তাদের মতে- রাজনৈতিক বিষয়ের আলোচনা বা রাজনৈতিক মতবাদ মূল্যবোধহীন হতে পারেনা। এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তাদের ধারণা অনুযায়ী স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট একটি মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা ও প্রসার সাধনই হল এই দৃষ্টিভঙ্গির মৌলিক লক্ষ্য।

অন্যদিকে আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তারা রাজনীতির আলোচনাকে মূল্য-নিরপেক্ষ করে তোলার পক্ষপাতী। যে কোন বৈজ্ঞানিক আলোচনার অন্যতম শর্ত হলো মূল্যবোধ নিরপেক্ষতা, এই কারণে আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা থেকে মূল্যবোধকে বাতিল করার পক্ষপাতি।

ii)  পদ্ধতিগত ক্ষেত্রে পার্থক্যঃ

সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রধানত ঐতিহাসিক ও দার্শনিক পদ্ধতির প্রাধাণ্য দেখা যায়। ফলে এই দৃষ্টিভঙ্গি অনেক ক্ষেত্রেই অনুমানভিত্তিক ও কল্পনাশ্রয়ী। এছাড়া সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গিতে অবরোহমূলক পদ্ধতি অনুসৃত হয়, অর্থাৎ এখানে পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়।

অন্যদিকে আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে বিজ্ঞানমনস্কতার প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় সমাজ বিজ্ঞানের পন্থা-পদ্ধতি অনুসরণ করার ওপর জোর দেয়। যেমন- তথ্য সংগ্রহ, বিচার-বিশ্লেষণ, তত্ত্বের যথার্থতা যাচাই প্রভূতি।

iii) আলোচ্য বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে পার্থক্যঃ

সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি প্রকৃতিগতভাবে অনেকটাই আইন ও প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তারা রাষ্ট্রের সংবিধান, আইনগত সার্বভৌমিকতা, আইনের অনুশাসন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সমূহের আইনগত কাঠামো ও কার্যাবলী প্রভূতির মধ্যে নিজেদের আলোচনাকে সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষপাতী।

অন্যদিকে আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় ব্যক্তির আচার-আচরণ, পছন্দ-অপছন্দ, চিন্তাধারা প্রভূতির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। কারণ রাজনীতির আচরণগত প্রকৃতি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচরণের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

iv) আন্তঃসামাজিক বিজ্ঞান সহযোগিতার ক্ষেত্রে পার্থক্যঃ

সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি আন্তঃসামাজিক বিজ্ঞান সহযোগিতাকে তেমনভাবে স্বীকার করেনা। কারন রাজনীতিকে অন্যান্য বিষয়ের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল করে তুললে রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতি তার নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য হারিয়ে ফেলবে। তাই সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশেষভাবে সজাগ।

অন্যদিকে আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি আন্তঃসামাজিক বিজ্ঞান সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। তাই আন্তঃসামাজিক বিজ্ঞান সহযোগিতার ওপর সামাজিক বিজ্ঞানগুলির সাফল্য ও সার্থকতা নির্ভরশীল।

v) উপযোগিতার ক্ষেত্রে পার্থক্যঃ

সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী যেকোনো সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবে কোনো কাজে না আসে তাহলে সেই দৃষ্টিভঙ্গি বা পদ্ধতি হবে মূল্যহীন। এই কারনে সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গিতে সেই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যার বাস্তব উপযোগিতা আছে।

অন্যদিকে আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে মূল্যনিরপেক্ষ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুশ্রুত হওয়ায় প্রাপ্ত ফলাফল বা সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তব উপযোগিতার ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি কোনো চিন্তা করে না। 

লেখক

জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ


এই বিষয়ের ওপর অন্যান্য নোটস

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

প্রথম অধ্যায়

১) রাজনৈতিক তত্ত্ব কাকে বলে? এর প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।


২) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার সাবেকি বা সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গীটি সমালোচনাসহ আলোচনা কর। ১০ (২০২১)


৩) রাজনীতি চর্চার সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করো। ৫ (২০১৯), ৫ (২০২২)


৪) রাজনীতি চর্চায় আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আলোচনা করো। এই দৃষ্টিভঙ্গির দুটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো। ১০ (২০২২)


৫) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা কর । ১০ (২০২০)


৬) আচরণবাদের সীমাবদ্ধতা গুলির উপর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর ।৫ (২০২১)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

৭) সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো।


৮) উত্তর-আচরণবাদের উপর একটি নিবন্ধ লেখ। ৫ (২০২০)


৯)রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার উত্তর-আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গীটি সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২১)


১০) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা কর ।

দ্বিতীয় অধ্যায়

১) সার্বভৌমিকতা কাকে বলে? এর প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।


২) সার্বভৌমিকতার একত্ববাদী তত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করো। একত্ববাদী তত্ত্বের মূখ্য প্রবক্তা কারা? ১০ (২০১৯), ১০ (২০২২)


৩) রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী তত্ত্বটি আলোচনা কর | ১০ (২০২০) ১০ (২০২১)

তৃতীয় অধ্যায়

১) অধিকারের ধারণাটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।


২) স্বাধীনতার ধারণাটিকে সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২০)


৩) সাম্যের ধারনাটি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)


৫) সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলোচনা কর। ১০ (২০২০) ১০ (২০২২)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

চতুর্থ অধ্যায়

১) উদারনীতিবাদী তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর ।


২) উদারনীতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।


৩)  নয়া-উদারনীতিবাদী তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর । ৫ (২০২১)


৪) নয়া-উদারনীতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর। ৫ (২০২০)

পঞ্চম অধ্যায়

১) রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে আদর্শবাদী বা ভাববাদী তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর । ১০ (২০২০)


২) উদারনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী রাষ্ট্রের প্রকৃতি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)


৩) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে উদারনৈতিক তত্ত্বের চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। ৫ (২০২২)


৪) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা করো। ৫ (২০১৯)


৫) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কসীয় তত্ত্বটি আলোচনা করো। ৫ (২০২২)


৬) রাষ্ট্রের প্রকৃতি বিষয়ে গান্ধীর তত্ত্বটি বিশ্লেষণ কর। ১০ (২০২০)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

Main Menu


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code