সাবেকি বা ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গি, Traditional Approach

Ad Code

সাবেকি বা ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গি, Traditional Approach

 

প্রশ্ন; রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার সাবেকি বা সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গীটি সমালোচনাসহ আলোচনা কর। ১০ (২০২১)

ভূমিকাঃ

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় যতগুলি দৃষ্টিভঙ্গি প্রচলিত আছে, সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি। সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তাদের মধ্যে অ্যারিস্টোটল, মেকিয়াভেলি, হবস, লক, রুশো, কান্ট, হেগেল প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির সংজ্ঞাঃ

সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি বলতে অ্যালান বল সেইসব দৃষ্টিভঙ্গিকে বুঝিয়েছেন যেগুলি ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় বিশেষভাবে অনুসৃত হত। যদিও তিনি সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি বলতে রাজনৈতিক আলোচনার জগতে অপ্রচলিত বা বাতিল হয়ে যাওয়া দৃষ্টিভঙ্গিগুলিকে বোঝাননি। এই দৃষ্টিভঙ্গি মূলত আদর্শ স্থাপনকারী, মূল্যবোধাত্মক, দার্শনিক, ঐতিহাসিক, আইনগত প্রভৃতি পদ্ধতিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু আলোচনা করে।

প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যঃ

উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির নিম্নলিখিত প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন-

i) মূল্যবোধাত্মক ধারণাঃ

সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তারা মূল্যবোধযুক্ত আলোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে, তাদের মতে- রাজনৈতিক বিষয়ের আলোচনা বা রাজনৈতিক মতবাদ মূল্যবোধহীন হতে পারেনা।

ii) ঐতিহাসিক ও দার্শনিক পদ্ধতি অনুসরনঃ

        সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রধানত ঐতিহাসিক ও দার্শনিক পদ্ধতির প্রাধাণ্য দেখা যায়। ফলে এই দৃষ্টিভঙ্গি অনেক ক্ষেত্রেই অনুমানভিত্তিক ও কল্পনাশ্রয়ী। এছাড়া সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গিতে অবরোহমূলক পদ্ধতি অনুসৃত হয়।

iii) প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রীক আলোচনাঃ

        সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি প্রকৃতিগতভাবে অনেকটাই আইন ও প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। তাই এই দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তারা রাষ্ট্রের সংবিধান, আইন, বা সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সমূহের মধ্যে নিজেদের আলোচনাকে সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষপাতী।

iv) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বতন্ত্র সংরক্ষণঃ

সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি আন্তঃসামাজিক বিজ্ঞান সহযোগিতাকে তেমনভাবে স্বীকার করেনা। তাই সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশেষভাবে সজাগ।

v) বাস্তব উপযোগীতাকেন্দ্রীক দৃষ্টিভঙ্গিঃ

সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী যেকোনো সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবে কোনো কাজে না আসে তাহলে সেই দৃষ্টিভঙ্গি বা পদ্ধতি হবে মূল্যহীন। এই কারনে সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গিতে সেই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যার বাস্তব উপযোগিতা আছে।

সমালোচনাঃ

        রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে সাবেকী দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করলেও এর সমালোচনাও কোনো অংশে কম নেই। নীচে সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনাগুলি উল্লেখ করা হল- 

i) মূল্যবোধের প্রাধান্যঃ

        সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গিতে মূল্যবোধের অবিসংবাদিত প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে রাজনৈতিক তত্ত্ব বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সঠিক তথা মুল্য নিরপেক্ষ আলোচানা পাওয়া সম্ভব হয়না।

ii) অনুমানভিত্তিক ও কল্পনাশ্রয়ীঃ

        সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রধানত ঐতিহাসিক ও দার্শনিক পদ্ধতির প্রাধাণ্য দেখা যায় বলে এই দৃষ্টিভঙ্গি অনেক ক্ষেত্রেই অনুমানভিত্তিক ও কল্পনাশ্রয়ী। কল্পনার উপর অত্যাধিক গুরুত্ব আরোপ করায় এই দৃষ্টিভঙ্গি অনেক ক্ষেত্রেই কাল্পনিক।

iii) ব্যাক্তি বা গোষ্ঠির ভূমিকা অস্বীকারঃ

সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গিতে রাজনৈতিক আলোচনাকে মূলত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বর্ণনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে তোলার ব্যাপারে মানুষেরই যে সক্রিয় ভূমিকা থাকে তা এই দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বীকার করা হয়নি।


iv) আন্তঃসামাজিক বিজ্ঞানের সহযোগিতা অস্বীকারঃ

        সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গিতে আন্তঃসামাজিক বিজ্ঞানের সহযোগিতার বিষয়টিকে অস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আন্তঃসামাজিক বিজ্ঞানের সহযোগিতার বিষয়টিকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায়না। কারন সমাজ বিজ্ঞানের পরিধি আজ এতটাই বিস্তৃত যে, সমাজ বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখা একে অন্যের পরিপূরক হিসাবে কাজ করে।

v) বাস্তব উপযোগিতার নিয়ে সংশয়ঃ

        সাবেকী দৃষ্টিভঙ্গিতে বাস্তব উপযোগীতার ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক তত্ত্ব বা তাত্ত্বিক কাঠামো তৈরির কথা বলা হয়।  কিন্তু সাবেকী দৃষ্টিভঙ্গিতে কল্পনার আশ্রয় এবং মূল্যবোধের প্রধান্য থাকায় এই দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তব উপযোগীতা নিয়ে সংশয় থাকে।

 মূল্যায়নঃ

উপরিউক্ত সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্বকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায়না। এখনো আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে। 


লেখক

জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ


এই বিষয়ের ওপর অন্যান্য নোটস

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

প্রথম অধ্যায়

১) রাজনৈতিক তত্ত্ব কাকে বলে? এর প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।


২) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার সাবেকি বা সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গীটি সমালোচনাসহ আলোচনা কর। ১০ (২০২১)


৩) রাজনীতি চর্চার সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করো। ৫ (২০১৯), ৫ (২০২২)


৪) রাজনীতি চর্চায় আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আলোচনা করো। এই দৃষ্টিভঙ্গির দুটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো। ১০ (২০২২)


৫) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা কর । ১০ (২০২০)


৬) আচরণবাদের সীমাবদ্ধতা গুলির উপর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর ।৫ (২০২১)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

৭) সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো।


৮) উত্তর-আচরণবাদের উপর একটি নিবন্ধ লেখ। ৫ (২০২০)


৯)রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার উত্তর-আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গীটি সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২১)


১০) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা কর ।

দ্বিতীয় অধ্যায়

১) সার্বভৌমিকতা কাকে বলে? এর প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।


২) সার্বভৌমিকতার একত্ববাদী তত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করো। একত্ববাদী তত্ত্বের মূখ্য প্রবক্তা কারা? ১০ (২০১৯), ১০ (২০২২)


৩) রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী তত্ত্বটি আলোচনা কর | ১০ (২০২০) ১০ (২০২১)

তৃতীয় অধ্যায়

১) অধিকারের ধারণাটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।


২) স্বাধীনতার ধারণাটিকে সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২০)


৩) সাম্যের ধারনাটি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)


৫) সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলোচনা কর। ১০ (২০২০) ১০ (২০২২)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

চতুর্থ অধ্যায়

১) উদারনীতিবাদী তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর ।


২) উদারনীতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।


৩)  নয়া-উদারনীতিবাদী তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর । ৫ (২০২১)


৪) নয়া-উদারনীতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর। ৫ (২০২০)

পঞ্চম অধ্যায়

১) রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে আদর্শবাদী বা ভাববাদী তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর । ১০ (২০২০)


২) উদারনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী রাষ্ট্রের প্রকৃতি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)


৩) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে উদারনৈতিক তত্ত্বের চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। ৫ (২০২২)


৪) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা করো। ৫ (২০১৯)


৫) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কসীয় তত্ত্বটি আলোচনা করো। ৫ (২০২২)


৬) রাষ্ট্রের প্রকৃতি বিষয়ে গান্ধীর তত্ত্বটি বিশ্লেষণ কর। ১০ (২০২০)

যে প্রশ্নের উত্তর দরকার 

সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।

উত্তর পেয়ে যাবে-

Main Menu


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code