রাজনীতির অর্থ বা রাজনীতির সংজ্ঞা
১) রাজনীতির অর্থ ও প্রকৃতি সম্পর্কে টিকা লেখ।
২) রাজনীতির সংজ্ঞা দাও। এর বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
৩) রাজনীতির ওপর একটি সংক্ষিপ্ত টিকা লেখ।
ভূমিকা;
রাজনীতি শব্দটির সাথে আমরা মোটামুটি সবাই পরিচিত। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর
পূর্বে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল সর্বপ্রথম রাজনীতির তত্ত্বগত আলোচনা শুরু করেন।
সেই সময় প্রাচীন গ্রীস ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগর-রাষ্ট্রে বিভিক্ত ছিল। এই নগর-রাষ্ট্রগুলিকে
বলা হয় ‘পোলিস’ আর এই ‘পোলিস’ থেকেই ইংরেজি ‘পলিটিক্স’ বা বাংলা ‘রাজনীতি’ শব্দটি
এসেছে। এই সময় পোলিস বা নগর-রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে যাবতীয় কার্যকলাপকে রাজনীতি
হিসাবে গণ্য করা হত। বর্তমানে রাজনীতি, নগর-রাষ্ট্রের গন্ডি অতিক্রম করে সমাজ
জীবনের প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রে এমনভাবে প্রবেশ করেছে যে, আমরা কেউই রাজনীতির
প্রভাব থেকে মুক্ত নই। রাজনীতি সম্পর্কে আমাদের প্রায় প্রত্যেকেরই প্রায় কমবেশি
ধারণা আছে। যদিও রাজনীতি সম্পর্কে আমাদের এই ধারণা যথেষ্ঠ সংকীর্ণ। কারন আমরা কেবল
ব্যাবহারিক বা নির্বাচনী অর্থেই রাজনীতিকে ব্যবহার করে থাকি।
রাজনীতির অর্থ;
বর্তমানে রাজনীতির পরিধি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে।
রাজনীতির এই ব্যাপক পরিধির জন্য এর অর্থগত ক্ষেত্রেও বিভিন্নতা বা বিতর্ক
পরিলক্ষিত হয়। এজন্য রাজনীতির অর্থ সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভের জন্য রাজনীতিকে
বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করা দরকার। যেমন- সাধারন অর্থে রাজনীতি, ব্যাপক অর্থে
রাজনীতি, ক্ষমতাকেন্দ্রিক দৃষ্টিতে রাজনীতি, মার্কসীয় দৃষ্টিতে রাজনীতি এবং আধুনিক
নারিবাদী দৃষ্টিতে রাজনীতি প্রভুতি।
সাধারণ অর্থে রাজনীতি;
সাধারণ অর্থে রাজনীতি বলতে রাজনীতির সংকীর্ণ অর্থকে বোঝানো
হয়। যেখানে রাজনীতিক কার্যকলাপ বলতে দলীয় রাজনীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত সকল কাজকর্মকে
বোঝানো হয়। যেমন- দলীয় মতবাদ, রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াই, নির্বাচন, আইনসভা বা
মন্ত্রিসভার গঠন প্রভূতি কাজকর্মকে বোঝানো হয়। এখানে অন্যান্য সকল প্রকার
কাজকর্মকে রাজনৈতিক কার্যকলাপের বাইরে রাখা হয়।
ব্যাপক অর্থে রাজনীতি;
ব্যাপক অর্থে রাজনীতি বলতে, বিশেষ কিছু ক্রিয়া-কলাপকে
বোঝানো হয়। মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কিত বিধিব্যবস্থার ব্যাপারে পরস্পরবিরোধী
মতামত বিভিন্ন দাবীদাওয়া এবং পরস্পরবিরোধী স্বার্থ থাকে। ফলে জনজীবনে মতানৈক্যের
সৃষ্টি হয়। এই মতানৈক্যের অবসানের জন্য মানুষ সহযোগিতার ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে
উদ্যোগী হয় এবং পরস্পর বিরোধী মতামত ও প্রতিদ্বন্দ্বী স্বার্থ সমূহের মধ্যে
সামঞ্জস্য সাধনের মাধ্যমে সামাজিক সুস্থিতি নিশ্চিত করে। এই প্রক্রিয়ার মানুষ কিছু
সাধারন নিয়মকানুন তৈরি করে ,সংরক্ষন করে ও সংশোধন করে এবং সেইসব বিধিব্যবস্থার
আওতায় মানুষ বসবাস করে। অর্থাৎ ব্যাপক অর্থে রাজনীতি হল, এক ধরনের সামাজিক
সিন্ধন্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া। যেখানে বিবিধ সামাজিক বিরোধ বা মতামতের মিমাংসা বা
সমাধান করা হয়।
ক্ষমতাকেন্দ্রীক দৃষ্টিতে রাজনীতি;
ক্ষমতাকেন্দ্রীক দৃষ্টিতে রাজনীতির অর্থ সর্বাধিক
ব্যাপক এবং র্যাডিক্যাল। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ি রাজনীতি সকল সামাজিক ক্রিয়াকর্মের
সঙ্গে এবং মানবজাতির অস্তিত্বের সকল ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত। রাজনীতির উদ্দেশই হল
ক্ষমতার অধিকার লাভ বা ক্ষমতার প্রয়োগ। রবার্ট ডাল ক্ষমতাকে রাজনীতির মুখ্য বিষয়
হিসাবে গণ্য করেন। তারমতে ক্ষমতা, কর্তৃত্ব বা শাসন হল রাজনৈতিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের
মূল কথা। হ্যারল্ড ল্যাস ওয়েলের মতে, ক্ষমতা সংগঠন এবং আংশিদার সম্পর্কিত আলোচনাই
হল রাজনীতি।
মার্কসবাদী দৃষ্টিতে রাজনীতি;
মার্কসবাদীরা রাজনীতিকে দুটি অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন,
একদিকে তারা রাজনীতিকে শোষণ-পীড়নের ক্ষমতা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। অন্যদিকে রাজনীতিকে
তারা উপরিকাঠামোর একটা অংশ হিসাবে প্রতিপন্ন করেছেন। কমিউনিস্ট ইস্তেহারে মার্কস
রাজনীতিক ক্ষমতাকে সংগঠিত ক্ষমতা হিসাবে দেখিয়েছেন, যেখানে একটি শ্রেণির এই সংগঠিত
ক্ষমতা ব্যবহার করা হয় অন্য শ্রেণির ওপর শোষণ-পীড়ন কায়েম রাখার জন্য। সমাজ জীবনের
মূল ভিত্তি হল অর্থনীতি এবং রাজনীতি হল সেই ভিত্তির উপরিকাঠামোর একটা অংশ।
আধুনিক নারীবাদী দৃষ্টিতে রাজনীতি;
আধুনিক নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে রাজনীতিকে সমাজের
ব্যাপকতর ক্ষেত্রে অর্থাৎ ব্যাক্তি বিশেষ ক্ষেত্রেও প্র্রয়োগের কথা বলা হয়। আধুনিক
নারিবাদীদের মতে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যক্তিগত ক্ষেত্রকে রাজনীতির বাইরে রেখে
কার্যত রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের বিরোধীতা করেছে এবং নারীকে গৃহের
সামগ্রী হিসাবে রেখে দিতে চেয়েছে। তাই আধুনিক নারীবাদিরা রাজনীতিক পরিধিকে
ব্যাক্তিগত তথা পারিবারিক ক্ষেত্র পর্যন্ত প্রসারিত করতে চেয়েছেন।
মূল্যায়ন;
সুতরং রাজনীতি
হল একটি সমাজ নির্ভর বিষয়। সামাজিক ক্রিয়াকলাপের বিশ্লেষণ ছাড়া রাজনীতিকে বোঝা
যায়না। রাজনীতি হল মানুষের সামাজিক আচরণের অংশমাত্র। তাই আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের
আলোচনায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রাজনৈতিক দল, চাপসৃষ্টিকারি গোষ্ঠী বা স্বার্থ
গোষ্ঠী, নির্বাচনি আচরণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়গুলিও রাজনীতির অন্তর্ভুক্ত।
এন জয়ারাম এর মতে, জনগণের প্রত্যাহিক জীবনে রাজনীতিকে
আইনসভা, সরকার, দল, নির্বাচন, ভোটদান, এবং সীমাহীন যুক্তিতর্ক এবং বাদানুবাদের
মধ্যে দেখে থাকি যা অনেক উত্তেজনা ও উন্মাদনার সৃষ্টি করে।
ডেভিড ইস্টনের মতে, কোনো সমাজে বা সামজিক সংগঠনে মূল্যবান বস্তু বা বিষয়ের
বাধ্যতামূলক বন্টনই হল রাজনীতি।
লেনিন রাজনীতিকে অর্থনীতির অতিব ঘনিভূত রূপ বলে চিহ্নিত করেছেন।
লেখক
জগন্নাথ বর্মন
সহকারী অধ্যাপক
সিউড়ী বিদ্যাসাগর কলেজ
এই বিষয়ের ওপর অন্যান্য নোটস
যে প্রশ্নের উত্তর দরকার
সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।
উত্তর পেয়ে যাবে-
প্রথম অধ্যায়
১) রাজনৈতিক তত্ত্ব কাকে বলে? এর প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।
২) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার সাবেকি বা সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গীটি সমালোচনাসহ আলোচনা কর। ১০ (২০২১)
৩) রাজনীতি চর্চার সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গির মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করো। ৫ (২০১৯), ৫ (২০২২)
৫) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা কর । ১০ (২০২০)
৬) আচরণবাদের সীমাবদ্ধতা গুলির উপর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর ।৫ (২০২১)
যে প্রশ্নের উত্তর দরকার
সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।
উত্তর পেয়ে যাবে-
৭) সাবেকি দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো।
৮) উত্তর-আচরণবাদের উপর একটি নিবন্ধ লেখ। ৫ (২০২০)
৯)রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার উত্তর-আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গীটি সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২১)
১০) রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা কর ।
দ্বিতীয় অধ্যায়
১) সার্বভৌমিকতা কাকে বলে? এর প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।
৩) রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতার বহুত্ববাদী তত্ত্বটি আলোচনা কর | ১০ (২০২০) ১০ (২০২১)
তৃতীয় অধ্যায়
১) অধিকারের ধারণাটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
২) স্বাধীনতার ধারণাটিকে সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫ (২০২০)
৩) সাম্যের ধারনাটি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)
৫) সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলোচনা কর। ১০ (২০২০) ১০ (২০২২)
যে প্রশ্নের উত্তর দরকার
সেই প্রশ্নের ওপর ক্লিক করো।
উত্তর পেয়ে যাবে-
চতুর্থ অধ্যায়
১) উদারনীতিবাদী তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর ।
২) উদারনীতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।
৩) নয়া-উদারনীতিবাদী তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা কর । ৫ (২০২১)
৪) নয়া-উদারনীতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর। ৫ (২০২০)
পঞ্চম অধ্যায়
১) রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে আদর্শবাদী বা ভাববাদী তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর । ১০ (২০২০)
২) উদারনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী রাষ্ট্রের প্রকৃতি আলোচনা কর। ১০ (২০২১)
৩) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে উদারনৈতিক তত্ত্বের চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। ৫ (২০২২)
৪) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিটি আলোচনা করো। ৫ (২০১৯)
৫) সংক্ষেপে রাষ্ট্র সম্পর্কে মার্কসীয় তত্ত্বটি আলোচনা করো। ৫ (২০২২)
৬) রাষ্ট্রের প্রকৃতি বিষয়ে গান্ধীর তত্ত্বটি বিশ্লেষণ কর। ১০ (২০২০)
0 মন্তব্যসমূহ